ঠাকুরমার ঝুলি - দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

thakurmar-jhuli-dakshinaranjan-mitra-majumder



ঠাকুরমার ঝুলি
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার


thakurmar-jhuli-dakshinaranjan-mitra-majumder-promo-apple



thakurmar-jhuli-dakshinaranjan-mitra-majumder-promo-kindle





প্রকাশনা তথ্য


প্রকাশকাল
প্রথম সংস্করণ শ্রাবণ ১৩১৪
প্রথম স্যাপ (SAAP) প্রকাশ ফেব্রুয়ারী ২০২২


প্রথম বৈদ্যুতিন সংস্করণ
ফাল্গুন ১৪২৮, ফেব্রুয়ারী ২০২২


প্রচ্ছদ



প্রকাশক
সুনীল আকাশ আত্মপ্রকাশ কেন্দ্র (SAAP) প্রকাশনা,
1215-40, Gordonridge Place,
Scarborough, Ontario : M1K 4H8, Canada.




                                                                                                                     
লেখক সম্পর্কে

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে (১২৮৪ বঙ্গাব্দের ২ বৈশাখ) বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সাভার-এর কাছে উনাইল গ্রামে প্রাচীন মিত্র মজুমদার বংশে রূপকথার অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক দক্ষিণারঞ্জন জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রমদারঞ্জন মিত্র মজুমদার।

প্রথমে মা কুসুমময়ী দেবীর কাছে এবং তাঁর মৃত্যুর পর পিসিমা রাজলক্ষ্মী দেবীর কাছে রূপকথার আনন্দের জগতের সন্ধান লাভ করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জগন্নাথ কলেজিয়েট স্কুলে ভরতি হন। এরপর পড়েন সন্তোষ জাহবী হাই স্কুল-এ। এখানেই তাঁর সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত। পঁচিশ বছর বয়সে তাঁর প্রথম বই উত্থান কাব্য প্রকাশিত হয়। এর আগেই পিতার সঙ্গে কিছুদিন মুর্শিদাবাদে কাটানোর সময় সুধা মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি ময়মনসিংহে পিসিমার কাছে চলে যান এবং গ্রাম্যপ্রকৃতি ও জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে রূপকথার প্রায় হারিয়ে যাওয়া সম্পদটিকে তিনি পুনরুদ্ধার করেন। গীতিকথা, ব্রতকথা, রূপকথা ও রসকথার চতুর্বর্গে তিনি কাহিনিগুলিকে বিন্যস্ত করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। স্বদেশি যুগে পিসিমার অর্থসাহায্যে কলকাতায় তিনি একটি প্রেস খুলেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি প্রদীপ, প্রকৃতি, ভারতী, সারথি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দীনেশচন্দ্র সেনের আগ্রহে ‘ভট্টাচার্য এন্ড সন্স’ থেকে— ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ প্রকাশিত হয়। দীনেশচন্দ্রের কাছেই রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণারঞ্জনের কথা শোনেন এবং ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ গ্রন্থের ভূমিকা রচনা করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্বদেশি গানের সংকলন যা বা আহুতি প্রকাশিত হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় নারীচরিত্রের মহিযাজ্ঞাপক গ্রন্থ আর্থনারী (২ খণ্ড) এবং প্রাচীন ভারতের ধর্মচিন্তা বিষয়ক শিশুপাঠ্য গ্রন্থ সচিত্র সরল চন্ডীপ্রকাশিত হয়। ঢাকা থেকে প্রকাশিত তোষণী পত্রিকায় তাঁর লেখা চারু ও হারু নামক কিশোর উপন্যাসটি ধারাবাহিক আকারে প্রকাশিত হয়। শিশু-কিশোরদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে তিনি অজস্র কবিতা, গল্প, জীবনী রচনা করেন। ১৯৩০-৩৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণারঞ্জন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি এই সংস্থার মুখপত্র পথ-এর প্রদর্শক সম্পাদকও ছিলেন। এই কাজে তাঁর বিজ্ঞানচেতনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের ‘বৈজ্ঞানিক পরিভাষা সমিতি’র কার্যকরী সভাপতি ও পরিভাষা রচয়িতার দায়িত্ব তিনি পালন করেন। ঢাকা বান্ধবসমাজ তাঁকে ‘কাব্যানন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি কলিকাতা সাহিত্য সম্মেলনে ‘বাণীরঞ্জন’ উপাধি, শিশুসাহিত্য পরিষদের ‘ভুবনেশ্বরী পদক’ লাভ করেন। লোকসংস্কৃতি পরিষদ, সব পেয়েছির আসর, নন্দন, সাহিত্যতীর্থ প্রভৃতি সংস্থা তাঁকে সম্মানিত করে। ১৩৬৩ বঙ্গাব্দের ১৬ চৈত্র তাঁর জীবনাবসান হয় (১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ)।

পিতার সাথে মুর্শিদাবাদে অবস্থানকালে ‘সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা’, ‘প্রদীপ’ প্রভৃতি পত্রিকাতে প্রবন্ধাবলি প্রকাশ করেন। পরে যখন পিসেমশায়ের জমিদারির ভারপ্রাপ্ত হয়ে ময়মনসিংহে থাকতে শুরু করেন সেই সময় দশ বছর ধরে বাংলার লুপ্তপ্রায় কথাসাহিত্যের সংগ্রহ ও গবেষণা করেন। পরে এই সংগৃহীত উপাদানসমূহ ও ড. দীনেশচন্দ্র সেনের উপদেশনুযায়ী রূপকথা, গীতিকার, রসকথা ও ব্রতকথা— এই চারভাগে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গের পল্লি-অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় বিপুল কথাসাহিত্যকে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’, ‘দাদামশায়ের থলে’, ‘ঠানদিদির থলে’ প্রভৃতি গল্পগ্রন্থে স্থায়ী রূপদান করেছেন। ১৯০১ সালে দক্ষিণারঞ্জনের সম্পাদিত মাসিক ‘সুধা’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তার প্রথম গ্রন্থ ‘উত্থান’ কাব্য প্রকাশিত হয় ১৯০২ সালে। তিনি খুব ভালো ছবি আঁকতেন। নিজের বইয়ের ছবি এবং প্রচ্ছদগুলো সব সময় তিনি নিজেই আঁকতেন। দক্ষিণারঞ্জন ছিলেন একজন অসাধারণ দারুশিল্পীও। কাঠের শিল্পকর্মে পটু ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সহ-সভাপতি ও উক্ত পরিষদের মুখপত্র ‘পথ’-এর সম্পাদক ছিলেন এবং পরিষদের বৈজ্ঞানিক পরিভাষা-সমিতির সভাপতিরূপে বাংলায় বিজ্ঞানের বহু পরিভাষা রচনা করেন।




॥ ভূমিকা ॥

ঠাকুরমার ঝুটির মত এত বড় স্বদেশী জিনিষ আমাদের এ দেশে আর কি আছে? কিন্তু হায় এই মোহন ঝুলিটিও ইদানীং ম্যাঞ্চেষ্টারের কল হইতে তৈরী হইয়া আসিতেছিল। এখনকার কালে বিলাতের “Fairy & Tales” আমাদের ছেলেদের একমাত্র গতি হইয়া উঠিবার উপক্রম করিয়াছে। স্বদেশের দিদিমা কোম্পানী একেবারে কত রাজ্য পরিবর্ত্তনের মাঝখান দিয়া অক্ষুন্ন চলিয়া আসিয়াছে, ইহার উৎস সমস্ত বাংলা দেশের মাতৃস্নেহের মধ্যে। যে স্নেহ দেশের রাজ্যের রাজা হইতে দীনতম কৃষককে পর্য্যন্ত বুকে করিয়া মানুষ করিয়াছে, সকলকেই শুক্ল সন্ধ্যায় আকাশের চাঁদ দেখাইয়া ভুলাইয়াছে এবং ঘুমপাড়ানি গানে শান্ত করিয়াছে, নিখিল বঙ্গদেশের সেই চিরপুরাতন গভীরতম স্নেহ হইতে এই রূপকথা উৎসারিত।

অতএব বাঙ্গালীর ছেলে যখন রূপকথা শোনে তখন কেবল যে গল্প শুনিয়া সুখী হয়, তাহা নহে—সমস্ত বাংলা দেশের চিরন্তন স্নেহের সুরটি তাহার তরুণ চিত্তের মধ্যে প্রবেশ করিয়া, তাহাকে যেন বাংলার রসে রসাইয়া লয়।

দক্ষিণারঞ্জনবাবুর ঠাকুরমা’র ঝুলি বইখানি পাইয়া তাহা খুলিতে ভয় হইতেছিল। আমার সন্দেহ ছিল, আধুনিক কলমের কড়া ইস্পাতের মুখে ঐ সুরটা পাছে বাদ পড়ে। এখনকার কেতাবী ভাষায় ঐ সুরটি বজায় রাখা বড় শক্ত—আমি হইলে ত এ কাজে সাহসই করিতাম না। ইতিপূর্বে কোনো কোনো গল্পকুশলা অথচ শিক্ষিতা মেয়েকে দিয়া আমি রূপকথা লিখাইয়া লইবার চেষ্টা করিয়াছি—কিন্তু হৌক মেয়েলি হাত, তবুও বিলাতী কলমের যাদুতে রূপকথার কথাটুকু থাকিলেও সেই রূপটি ঠিক থাকে না; সেই চিরকালের সামগ্রী এখনকার কালের হইয়া উঠে।

কিন্তু দক্ষিণাবাবুকে ধন্য! তিনি ঠাকুরমা’র মুখের কথাকে ছাপার অক্ষরে তুলিয়া পুঁতিয়াছেন তবু তাহার পাতাগুলি প্রায় তেমনি সবুজ, তেমনি তাজাই রহিয়াছে। রূপকথার সেই বিশেষ ভাষা, বিশেষ রীতি, তাহার সেই প্রাচীন সরলতাটুকু তিনি যে এতটা দূর রক্ষা করিতে পারিয়াছেন, ইহাতে তাঁহার সূক্ষ্ম রসবোধ ও স্বাভাবিক কলানৈপুণ্য প্রকাশ পাইয়াছে।

এক্ষণে আমার প্রস্তাব এই যে, বাংলা দেশের আধুনিক দিদিমাদের জন্য অবিলম্বে একটা স্কুল খোলা হউক এবং দক্ষিণাবাবুর এই বইখানি অবলম্বন করিয়া শিশু-শয়ন-রাজ্যে পুনর্বার তাঁহারা নিজেদের গৌরবের স্থান অধিকার করিয়া বিরাজ করিতে থাকুন।

বোলপুর
২০শে ভাদ্র, ১৩১৪
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


প্রকাশিত গ্রন্থ

ঠাকুরমার ঝুলি (১৯০৭ সাল)

ঠাকুরদাদার ঝুলি (১৯০৯ সাল)

ঠানদিদির থলে (১৯০৯ সাল )

দাদামাশয়ের থলে (১৯১৩ সাল)

খোকাবাবুর খেলা

আমাল বই

চারু ও হারু

ফার্স্ট বয় (১৯২৭ সাল)

লাস্ট বয়

বাংলার ব্রতকথা

সবুজ লেখা

আমার দেশ

সরল চন্ডী (১৯১৭),

পুবার কথা (১৯১৮)

উৎপল ও রবি (১৯২৮),

কিশোরদের মন (১৯৩৩),

কর্মের মূর্তি (১৯৩৩),

বাংলার সোনার ছেলে (১৯৩৫),

সবুজ লেখা (১৯৩৮),

পৃথিবীর রূপকথা (অনুবাদ গ্রন্থ)

চিরদিনের রূপকথা (১৯৪৭),

আশীর্বাদ ও আশীর্বাণী (১৯৪৮)
Share:

Post a Comment

Copyright © SAAP Publication.