শুভা - নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত

subha-noreshchandra-sengupta



শুভা
নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত


subha-noreshchandra-sengupta-apple-promo



subha-noreshchandra-sengupta-kindle-promo





প্রকাশনা তথ্য


প্রকাশকাল
প্রথম প্রকাশ ১৯৩০ খ্রীস্টাব্দ
প্রথম স্যাপ (SAAP) প্রকাশ মে ২০২২


প্রথম বৈদ্যুতিন সংস্করণ
জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯, মে ২০২২


প্রচ্ছদ



প্রকাশক
সুনীল আকাশ আত্মপ্রকাশ কেন্দ্র (SAAP) প্রকাশনা,
1215-40, Gordonridge Place,
Scarborough, Ontario : M1K 4H8, Canada.




                                                                                                                     
লেখক সম্পর্কে

নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত (৩ মে ১৮৮৩ - ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪) একজন বাঙালি আইনজীবী, অধ্যাপক এবং প্রগতিশীল সাহিত্যিক ছিলেন।

নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় তার মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল টাঙ্গাইলের বাঁশীতে। তার পিতার নাম মহেশচন্দ্র। মহেশচন্দ্র ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে নরেশচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এম এ পাস করেন। তারপর তিনি নিও-জার্মান অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ফিলোজফির উপরে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি কলেজে গবেষণা করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ওকালতি পাস করে তিনি হাইকোর্টে যোগ দেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে অধ্যাপনা আরম্ভ করেন। তিনি প্রাচীন ভারতের ব্যবহার এবং সমাজনীতি নিয়ে গবেষণা করে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ডিএল উপাধি পান। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা আইন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল নিযু্ক্ত হন। ১৯২০ থেকে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ছিলেন। আইন উপদেষ্টা হিসাবে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতায় আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এই সময়ে ডিন অফ দ্য ফ্যাকাল্টি অফ ল হন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর আইন অধ্যাপক হন। ইউনেস্কোর আমন্ত্রণে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় আইন কমিশনের সদস্য হন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে রিপন কলেজ এবং সিটি কলেজের সাথেও যুক্ত ছিলেন। আইন সংক্রান্ত কিছু গ্রন্থ তিনি রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে ‘ইভোলিউশন অফ ল’ বিখ্যাত।

তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম প্রধান ও জগন্নাথ হলের প্রথম প্রোভস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদানের পূর্বে তিনি ঢাকা কলেজের সহঅধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে তিনি নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরেন ও পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দাবি করেন। তার উৎসাহে জগন্নাথ হলের বার্ষিক পত্রিকা “বাসন্তিকা” প্রকাশিত হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সফরে এলে তিনি বাসন্তিকার জন্য তার বিখ্যাত গান “এই কথাটি মনে রেখ” লিখেছিলেন।

সফল আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি বহু প্রবন্ধ, গল্প, নাটক ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যে জীবনধর্মী উপন্যাস রচনার পথিকৃৎ। তাকে নিয়ে এক সময় বাংলা সাহিত্যে শ্লীলতা-অশ্লীলতা এবং নীতি ও দুর্নীতির বিতর্ক হয়েছিল। তিনি ছিলেন সুষ্ঠ যৌন আবেগমূলক রোচক সাহিত্যের গুরু। তার উপন্যাসে যৌন এবং অপরাধ তত্ত্ববিশ্লেষণ প্রাধান্য পেয়েছিল। তিনি নারীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে তথাকথিত বিশুদ্ধ সতীত্বের থেকে বেশি মর্যাদা দিয়েছিলেন। তার দীর্ঘ ওকালতি জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে মানবমনের নানা কুটিল গতিপ্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করেছিল। তার একাধিক উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছিল। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০টি। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসটি ইংরেজিতে ‘অ্যাবে অফ ব্লিস’ নামে অনুবাদ করেন।

তার প্রথম উপন্যাস শুভায় (১৯২০) নায়িকার স্বামীর গৃহ ত্যাগ এবং স্বাধীন জীবনযাপনের ইচ্ছার সাহসের পরিচয় পাওয়া যায়। পাপের ছাপ-এ (১৯২২) দুঃসাহসিকতার পরিচয় আরো স্পষ্ট। যৌনভাবাশ্রিত ক্রিমিনাল মনোবৃত্তির চিত্রণ বাংলা উপন্যাসে এই প্রথম। মেঘনাদ-এ দেখা যায় নায়িকার চরিত্রে জন্মগত অপরাধীর স্বাভাবিক পাপপ্রবণতার চিত্র। লুপ্তশিখায় পতিতা নারীর জীবনের ক্লেদাক্ত গ্লানিময় দিকটিকে আদর্শবাদের আবরণে গোপন করে রাখবার কোন চেষ্টা করা হয় নি। সর্বহারায় পাওয়া যায় বেপরোয়া নাস্তিকের ছবি। বিপর্যয়ে দেখানো হয়েছে বৈপরীত্যের চিত্র। মনোরমার কঠোর বৈধব্য ব্রত পালন, আত্মনিগ্রহের ভিতর দিয়ে যৌবন চঞ্চলতার অনুভব ও এই নবজাত আকাঙ্খার বিবাহে পরিতৃপ্তি সাধন। আর অনীতার ভোগ এবং ঐশ্বর্যপূর্ণ জীবনের কঠোর বৈরাগ্য ও কোমল বৈষ্ণব প্রেমতত্ত্ব উপলব্ধির মধ্যে পরিসমাপ্তি—এই দুটি চিত্র পরিবর্তন সম্ভাবনার দুই বিপরীত সীমা স্পর্শ করেছে।

কিন্তু এই চরিত্রগুলিতে প্রাণ সঞ্চারের অক্ষমতা, ঘটনা সমাবেশের আকস্মিকতা এবং তাদের অবিশ্বাস্য দ্রুত নাটকীয় পরিবর্তন, ভাব গভীরতার অভাব প্রভৃতির জন্য তার উপন্যাসগুলিতে নূতনত্বের প্রতিশ্রুতি যতটা আছে পূর্ণতা ততটা নেই। আধুনিক বাংলা উপন্যাসে তার গুরুত্ব সম্পর্কে ড: শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন: “বর্তমানে তিনি কেবল কতকগুলি নূতন ঈঙ্গিত ও পথ নির্দেশের কৃতিত্ব দাবী করিতে পারিবেন। তথাপি এই নূতন ধারা প্রবর্তনের দ্বারা তিনি যে উপন্যাসের সীমা প্রসারিত করিয়াছেন তাহা সর্বোতোভাবে স্বীকার্য।”

প্রথম জীবনে তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং তিনি কংগ্রেস কর্মী হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯২৫-২৬ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ওয়ার্কাস অ্যান্ড পেজ্যান্টস্ পার্টির প্রেসিডেন্ট হন। পরে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে লেবার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২১ জুন ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাক্সিম গোর্কির মৃত্যুতে কলকাতায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সঙ্ঘের যে সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়েছিল তিনি তারও সভাপতি হয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রগতিশীল চিন্তা বিস্তারের ক্ষেত্রে এই সঙ্ঘের বিশেষ অবদান ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের কনফারেন্স কক্ষটির নাম নরেশচন্দ্রের সম্মানে ‘অধ্যাপক ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত কনফারেন্স কক্ষ’ নামকরণ করা হয়।





॥ উপোদ্‌ঘাত ॥

“শুভা” উপন্যাস, sermon নহে। কোনও বিশেষ উপদেশ বা মত প্রচার ইহার উদ্দেশ্য নহে। মানব জীবন মাত্রই এক একটা নীতি কথা; প্রত্যেক মানুষের জীবন আলোচনা করিয়া নিজেদের আকাঙ্ক্ষা ও সংস্কার অনুযায়ী শিক্ষা ও উপদেশ বাহির করা যাইতে পারে। শুভা, চাঁপা, চপলা, মৈলী নগেন্দ্র, নিবারণ ও সুরেশ, ইহাদের সকলকেই আমি রক্তমাংসের মানুষ রূপে চিত্রিত করিতে চেষ্টা করিয়াছি। যদি আমার সে চেষ্টা সফল হইয়া থাকে, তবে যাঁহারা “Sermons in stones and books in brooks” পাইয়া থাকেন, তাঁহারা ইহাদের জীবনে উপদেশ ও শিক্ষা পাইতে পারেন। কিন্তু ইহাদের কাহারও জীবনের দ্বারা কোনও বিশিষ্ট উপদেশ বা মতবাদ প্রচার করা আমার উদ্দেশ্য নহে।

পুস্তকের মধ্যে প্রসঙ্গ-ক্রমে নানা মতামতের আলোচনা হইয়াছে। সে মতামত আমার নহে, বক্তাদের। এ বিষয়ে গল্প-লেখক যে কতটা পরতন্ত্র, এ কথা সকলে হৃদয়ঙ্গম করেন না বলিয়া অনেক সময় গ্রন্থকারের উপর অবিচার করেন। বক্তার চরিত্র তাহার আবেষ্টন ও সাময়িক অবস্থায় তাহার মুখে যখন যে কথাটি মানাইবে, তাই লিখিতে গ্রন্থকার বাধ্য হন। কিন্তু তার কোনও একটা মত যে গ্রন্থকারের নিজের এ কথা মনে করা অসঙ্গত হইবে।

আর একটা কথা বলিয়া রাখি। আমি এ গল্পে আদর্শ-রচনা করিতে চেষ্টা করি নাই। আবার নিভাঁজ villain অঙ্কিত করি নাই। এই saint ও villain আমার অপরিচিত। জগতে এমন লোক থাকিতে পারে, কিন্তু আমি দেখি নাই। জগৎকে আমি যেমন দেখিয়াছি তেমনি চিত্রিত করিতে আমি বাধ্য।

আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থায় কয়েকটি শক্তি ও আদর্শের ক্রিয়া দেখা যায়, তাহাদের সমন্বয় এখনও হয় নাই। কোন্ পথে সমন্বয় হইবে, তাহা দেখান আমার উদ্দেশ্য নয়। কয়েকটি বিশিষ্ট চরিত্রের উপর সেই সব আদর্শের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার একটা ছবি পাঠক-সমাজে উপস্থিত করিবার চেষ্টা করিয়াছি মাত্র।

আমার এ উপন্যাসের সমালোচনা করিবার সময় পাঠকগণ এই কয়েকটি কথা স্মরণ রাখিলে আমি কৃতার্থ হইব। আমার বর্ণনা সকল দেশ-কাল-পাত্র হিসাবে সত্য কি না কেবলমাত্র এই কথাটাই যদি তাঁহারা বিচার করেন তবেই আমি সুবিচারের আশা করিব। উপন্যাস হিসাবে এ সম্বন্ধে অন্য কোনও মানদণ্ড সম্ভব নয়।

ছাপার কতকগুলি গুরুতর ভুল রহিয়া গিয়াছে। সেটা অনেকটা আমার ত্রুটি। যদি দ্বিতীয় সংস্করণ বাহির করিবার সৌভাগ্য হয়, তবে তাহা ভ্রমশূন্য করিবার চেষ্টা করিব।

শ্রীনরেশচন্দ্র সেন গুপ্ত


প্রকাশিত গ্রন্থ

নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত রচিত উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ:


অগ্নি সংস্কার (১৯১৯),

শুভা, দ্বিতীয় পক্ষ (১৯২০),

পাপের ছাপ, রক্তের ঋণ (১৯২২),

শাস্তি, কাঁর ফুল, আনন্দ মন্দির (নাটক), ভাগের পূজা (১৯২৩),

গ্রামের কথা, বিপর্য্যয় (১৯২৪),

ঋষির মেয়ে, দূরের আলো, মিলন পূর্ণিমা (১৯২৬),

লুপ্তশিখা (১৯৩০),

রূপের অভিশাপ (গল্পগ্রন্থ)

ঠানদিনি (গল্পগ্রন্থ)

স্বপ্ন সৌধ

Share:

Post a Comment

Copyright © SAAP Publication.