লিয়াওচাই-এর অদ্ভুত কাহিনী—নির্বাচিত সংকলন

Liaochai-er-Advut-Kahini


লিয়াওচাই-এর অদ্ভুত কাহিনী
—নির্বাচিত সংকলন



On Amazon

On Apple

On Kobo

On Google Play

On Google Books


প্রকাশনা তথ্য


প্রথম বৈদ্যুতিন সংস্করণ
জুন ২০২৩, জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০


প্রচ্ছদ


প্রকাশক
সুনীল আকাশ আত্মপ্রকাশ কেন্দ্র (SAAP) প্রকাশনা,
1215-40, Gordonridge Place,
Scarborough, Ontario : M1K 4H8, Canada.






                                                                                                                     

দুটি গল্প

অদ্ভুত পায়রা


জগতে এত জাতের পায়রা আছে যে গুণে শেষ করা যায় না। এদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভ হল শানশীর পৃথ্বী তারকা, শানতুং-এর সরেস সারস, কুইচৌ-এর যুগল প্রজাপতি, হোনানের ডিগবাজি এবং চেচিয়াং-এর ছুঁচলো নখ। আর আছে জুতামাথা, ফুটকি, শ্বেত-কপোত, কৃষ্ণ পাথর, স্বামী-স্ত্রী চড়ুই, কুকুরচোখ ইত্যাদি আরো অনেক জাতের। এত নাম যে তার হিসেব নেই। তবে পায়রাদের জাতপার্থক্য তাদের সমজদারেরাই করতে পারেন।

জৌফিং-এ চাং কুংলিয়াং নামে এক যুবক ছিল। পায়রা পোষা ছিল তার ভীষণ সখ। ‘পায়রা শাস্ত্র’ নামক গ্রন্থে বর্ণিত প্রতিটি জাতের পায়রা জোগাড়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে সে কৃতকার্য হয়েছিল। পায়রাদের সে এমনভাবে যত্ন করত যেন সেগুলো ছিল নিজের ছেলেমেয়ে। তারা যাতে ঠাণ্ডায় কষ্ট না পায় সেজন্য সে তাদের খেতে দিত সোমলতার গুড়া, গরম পড়লে দিত লবণদানা। পায়রারা ঘুমুতে ভালবাসে, কিন্তু তাদের নিদ্রা গভীর হলে তাদের দেহ অসাড় হয়ে যেতে পারে এবং তাদের মৃত্যুও হতে পারে। চাং ইয়াংচৌ থেকে দশ ভরি রূপা দিয়ে একটি পায়রা কিনেছিল। তার পায়রাগুলোর মধ্যে এটিই ছিল আকারে সবচেয়ে ছোট। সে সব সময় হেঁটে চলে বেড়াতেই পছন্দ করত, মাটিতে ছেড়ে দিলে সে ওখানেই ঘুরপাক খেত, মারা যাবে তবু বিশ্রাম করতে চাইত না। তাই তাকে প্রায় সব সময়েই আটকে রাখতে হত। রাত্রে তাকে অন্য পায়রাদের সঙ্গে রাখা হত যাতে সে তার সঙ্গীদের গভীর নিদ্রার ফলে অসাড় হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই এর নাম দেয়া হয়েছিল ‘নিশাচর’। শানতুং-এ পায়রা পোষকদের মধ্যে চাং কুংলিয়াং-এরই স্থান ছিল সবার আগে। তাই সে এই সব পায়রার জন্যে খুব গৌরব বোধ করত।

একদিন রাত্রে, চাং তার পড়ার ঘরে বসে ছিল। এমন সময় হঠাৎ দরজায় টোকা দিয়ে সাদা পোশাক পরা একটি যুবক ঘরে ঢুকল। আগে তাদের কখন সাক্ষাৎ হয় নি। তার নাম কি চাং জানতে চাইলে সে উত্তরে বলল, “আমার নাম জেনে তোমার কোন লাভ নেই। আমি হচ্ছি এক ভবঘুরে। আমি দূর দেশে থাকতেই তোমার পায়রা-গুলোর প্রশংসা শুনেছি। পায়রাই হল আমার জীবন, তাই তোমার পায়রাগুলো দেখতে পেলে আমি খুব খুশি হব।” তখন চাং তার বিভিন্ন রঙের এবং পশমীর মত চকচকে উজ্জ্বল সব জাতেরই পায়রা তাকে দেখাল। তা দেখে আগন্তুক যুবক একটু হেসে বলল, “এরকম সুনাম সত্যিই তোমার প্রাপ্য, পায়রা পোষায় নিঃসন্দেহে তুমি অদ্বিতীয়। আমি সঙ্গে করে এক জোড়া পায়রা নিয়ে এসেছি। দেখতে ইচ্ছে করলে আমার সঙ্গে চল।”

চাং খুব আনন্দিত হয়ে ওই যুবকের সঙ্গে চলল। কিন্তু আবছা আবছা জ্যোৎস্না আর নির্জন মাঠের মধ্যে যেতে যেতে এক অমঙ্গলের আশংকায় চাং-এর প্রাণ চমকে উঠল। এমন সময় তার সঙ্গী সামনের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে উঠল, “আর একটু কষ্ট করে চল। ওই দেখা যাচ্ছে আমার বাড়ি।” আরও কয়েক পা এগিয়ে গেলে সামনে দেখা গেল দুই কামরাবিশিষ্ট তাওধর্মীদের একটি মন্দির। সেখানে কোন আলো না থাকায় যুবকটি চাং-এর হাত ধরে ওই মন্দিরে ঢুকল।

উঠোনে এসে দাঁড়াতেই যুবকটি পায়রার স্বরের মত ডেকে উঠল। অমনি সাদা পালকের সাধারণ জাতের দুটি পায়রা একটি আরেকটিকে ধাওয়া করে আর ঝগড়া করতে করতে এবং ডিগবাজি খেতে খেতে ঘরের ছাঁইচের দিকে উড়ে চলল। তখন তাদের মালিক তার একটা হাত তুলে সংকেত দিতেই তারা পরস্পরের ডানা মিলিয়ে ওখান থেকে উড়ে চলে গেল।

তারপর যুবকটি এক অদ্ভুত ধরনের শিস দিতেই আরো দুটি পায়রা বেরিয়ে এল। এদের মধ্যে একটি ছিল পাতিহাঁসের মত বড়, আরেকটি ছিল প্রায় মানুষের মুষ্টির সমান। তারা সিঁড়িগুলোর ওপর বকের ভঙ্গিতে নৃত্য করতে লাগল। তারপর বড় পায়রাটি গলা বাড়িয়ে ও ডানা মেলে এদিক ওদিক হেলে দুলে চলতে লাগল কিংবা অপরটিকে এগিয়ে আসার জন্য বাকবাকুম করতে করতে ডানা ঝাপটাতে লাগল, আর ছোট পায়রাটি তাতে সাড়া দিয়ে যেমন করে একটি চড়ুই পাখি পত্ পত করে উড়ে এসে তালপাতার উপর বসে তেমনি করে খঞ্জনির মত আওয়াজ তুলে উড়তে উড়তে বড় পায়রাটির মাথার উপরে এসে বসার চেষ্টা করতে লাগল। তখন বড় পায়রাটি তার গলাটা এগিয়ে দিল, একটুও নড়বার সাহস হল না তার। পায়রা দুটির কণ্ঠ আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল, তাদের সুরেলা ধ্বনি, আর তালও এক। হঠাৎ ছোট পায়রা উড়ে গেল এবং তাকে প্রলুব্ধ করে নীচে নামিয়ে আনবার জন্য বড় পায়রাটি নাচতে শুরু করল।

এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে চাং আনন্দে আটখানা হল। তখন সে করজোড়ে প্রার্থনা করার ভঙ্গিতে যুবকের কাছে এরূপ ক’টি পায়রা চাইল। কিন্তু যুবক না করলে চাং বারবার অনুনয় বিনয় করতে লাগল। তখন যুবকটি হুস হুস আওয়াজ করে ওই পায়রা দুটিকে তাড়িয়ে দিল এবং আগের পায়রার মত ডেকে সাদা পায়রা দুটিকে আবার আনাল। সে পায়রা দুটিকে হাতে নিয়ে বলল, “এ দুটো অপছন্দ না হলে তুমি নিতে পার।”

পায়রা দুটি হাতে নিয়ে চাং তাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল। চাঁদের আলোয় তাদের চোখগুলো পীতাভ স্ফটিকের মত স্বচ্ছ হয়ে উঠল, তাদের চোখের মণি ছিল নিকষ ঘন কালো ও মরিচের বীচির মত গোল। তাদের ডানাগুলো মেলে ধরলে সে দেখল যে তাদের পাজরের উপর মাংস স্ফটিকের মতই স্বচ্ছ, তাদের দেহের ভেতরের সূক্ষ্ম অস্ত্রগুলোও স্পষ্ট নজরে আসে। পায়রা দুটি দেখে সে অবাক হয়ে গেল এবং এমন ধরনের আরো ক’টি পায়রার জন্য সে অনুরোধ করল।

যুবকটি বলল, “আমার আরো দুরকমের পায়রা আছে, যা তুমি দেখ নি। কিন্তু এখন সেগুলো দেখানোর ভরসা পাচ্ছি না।” তারা যখন এভাবে আলাপ-আলোচনা করছিল, তখন চাং-এর পরিচারকেরা মশাল নিয়ে তার খোঁজে সেখানে এসে উপস্থিত হল। তখন যুবকটির দিকে ফিরে তাকাতেই সে দেখল যে মোরগের মত বড় একটি সাদা পায়রা শূন্যে উড়ে যাচ্ছে আর তখনি সেই প্রাঙ্গণ ও বাড়িটিও অদৃশ্য হল, সেখানে শুধু দুটি দেবদারু গাছের পাশে একটি ছোট কবর দেখা গেল।

চাং অবাক হয়ে পায়রা দুটি হাতে নিয়ে তার পরিচারকদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে এল। সে পায়রা দুটিকে পরীক্ষা করে দেখল তারা বেশ ভালই তালিম পেয়েছে। জাতের দিক থেকে বিচারে পায়রা দুটি সর্বোৎকৃষ্ট না হলেও জগতে এদের মত পাখি খুবই বিরল। তাই সে এদের খুব ভালভাবে প্রতিপালন করতে লাগল। দু’ বছর পর এরা ডিম ফুটিয়ে তিনটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী জাতের বাচ্চা দিল। চাং তাদের কাছছাড়া করত না, এমনকি নিকট আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের হাতেও সে তাদের দিত না।

একদিন, তার বাবার এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল, তিনি চাংকে জিজ্ঞাসা করলেন তার কত পায়রা আছে। তাতে সে দায়সারা গোছের একটা উত্তর দিল। কিন্তু বাড়ি এসে চাং-এর মনে হল, তাঁর যখন পায়রা সম্পর্কে খুব আগ্রহ আছে তখন তাঁকে একজোড়া পায়রা উপহার দেয়া উচিত। অতি প্রিয় পায়রা হাতছাড়া করার ইচ্ছা তার ছিল না, আবার এমন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে একজোড়া সাধারণ পায়রা দেয়াও ঠিক নয়। ফলে সে তার সাদা পায়রাগুলো থেকে একজোড়া পায়রা খাঁচায় পুরে তাঁকে উপহার দিল। রাজকর্মচারীর কাছে এ ছিল এক লাখ স্বর্ণমুদ্রার চাইতেও অধিক মূল্যবান। কিছু দিন পর ওই রাজকর্মচারীর সঙ্গে চাং-এর আবার সাক্ষাৎ হল। চাং-এর মুখে নিজের মহানুভবতার জন্য গর্বভাব ফুটে উঠল। কিন্তু রাজকর্মচারীর মুখ থেকে ধন্যবাদসূচক কোন উক্তিই বেরুল না। নিজকে আর সংবরণ করতে না পেরে সে জিজ্ঞেস করল, “আমার পাখিগুলো কি আপনার পছন্দ হয়েছিল?”

“হাঁ, বেশ মেদবহুল ও সুস্বাদু ছিল।” একথা শুনেই চাং বিমুঢ় হয়ে পড়ল।

“আপনি খেয়ে ফেলেছেন?”

“হাঁ।”

চাং আঁৎকে উঠে প্রতিবাদের সুরে বলল, “কিন্তু ওরা সাধারণ পায়রা ছিল না। খুব দুর্লভ জাতের পাখি।”

রাজকর্মচারী যেন কষ্ট কল্পিত ভাবে বললেন, “কিন্তু খাওয়ার সময় ত স্বাদ তেমন বিশেষ বলে মনে হয় নি।”

অত্যন্ত বিষণ্ণ মনে চাং সেখান থেকে চলে এল। সেই রাত্রে সাদা পোষাকধারী যুবকটি তাকে স্বপ্নে দেখা দিল এবং তাকে তিরস্কার করে বলল, “তুমি যত্ন করবে ভেবে আমি আমার ছোট বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব তোমাকে দিয়েছিলাম। কেমন করে তুমি এই মুক্তোকে ছুড়ে ফেলে দিলে? এদের হত্যা করে খেয়ে ফেলার জন্য তুমিই দায়ী আমি এখনই আমার বাচ্চাদেরকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।” তারপর সে একটি পায়রার রূপ নিল এবং একবার হাঁক ছাড়ল, আর চাং-এর সাদা পায়রাগুলো তার পেছনে উড়ে চলল। পরদিন সকালে চাং যখন পায়রাদের খোঁজখবর নিতে গেল তখন দেখল যে তার সাদা পায়রাগুলো আর নেই। ভগ্নহৃদয়ে সে তার অবশিষ্ট পায়রাগুলো বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে লাগল, কয়েক দিনের মধ্যে তার আর একটি পায়রাও অবশিষ্ট রইল না।

এই অদ্ভুত কাহিনীর নিবেশক পরিশেষে মন্তব্য করেছেন : এ কথাটা খুবই সত্যি যে মানুষ যদি কোন জীবকে ভালবাসে তাহলে সেই জীব তার কাছে যাবেই। শে রাজ্যের রাজা ড্রাগন এত ভালবাসতেন যে একদিন তাঁর ঘরে একটি সত্যিকার ড্রাগন এসে উপস্থিত হয়েছিল*। উত্তম মিত্রের জন্য পণ্ডিতদের আকাংক্ষা বা জ্ঞানী রাজা যিনি যোগ্য মন্ত্রীর কদর দেন সে ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। একমাত্র টাকাপয়সাই হচ্ছে এর ব্যতিক্রম। কারণ অনেকেই তা পেতে চায়, কিন্তু কজনই বা তা জমাতে পারে। স্পষ্টতঃ, দেবতারা লোভীদেরকে ঘৃণা করেন, কিন্তু সঞ্চয়কারীদের আসক্তিকে নয়।

* একটি প্রসিদ্ধ চীনা গল্প : শে-এর রাজা সর্বত্রই ড্রাগনের ছবি অঙ্কন বা খোদাই করিয়ে রেখেছিলেন, কাজেই একদিন সত্যিকার ড্রাগন এসে তার ঘরে উপস্থিত হয়েছিল।

স্বপ্ন


চিলি প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন বৃদ্ধ পাই। তাঁর বড় ছেলে চিয়া দক্ষিণ চীনের কোন এক জেলার জেলাশাসক ছিল। বাড়ি থেকে অনেক দূর বলে বৃদ্ধ পাই তিন বছর ধরে তাঁর এই ছেলের কোন খবর পেলেন না।

একদিন তিং নামে তাঁর এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় দীর্ঘদিন পর পাই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন। পাই তাকে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে অভ্যর্থনা করলেন। তিং-এর ছিল প্রেতাত্মাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। কথা প্রসঙ্গে, পাই তাঁকে প্রেতলোক সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিং তাঁকে ক’টি অলৌকিক ঘটনার কথা বললেন। তা শুনে বৃদ্ধ পাই অবিশ্বাসের সুরে হাসতে লাগলেন। এর কিছুদিন পর, একদিন বৃদ্ধ পাই ঘুমাচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখলেন তিং সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে পায়চারী করতে যাওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলেন। তখন বৃদ্ধ পাই তিং-এর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে একটি শহরে এলেন। সেখানে তিং ইশারা করে তাঁকে একটি দরজা দেখিয়ে বললেন, “ওই বাড়িতে আপনার ভাগ্নে থাকে।”

তাঁর এই ভাগ্নে তখন শানশী প্রদেশে এক জেলা শাসক নিযুক্ত ছিল। তাই বৃদ্ধ পাই বললেন, “তা কেমন করে হয়?”

“বিশ্বাস না হলে ভিতরে গিয়ে দেখে আসুন।” তিং উত্তর দিলেন।

তখন বৃদ্ধ পাই ভেতরে গিয়ে দেখলেন, সত্যিই এক পদস্থ রাজকর্মচারীর শিরোপা ও পোশাক পরে তার ভাগ্নে চারধারে অনেক সশস্ত্র প্রহরী এবং অনুচর নিয়ে হলঘরে একটি উচ্চাসনে বসে আছে। বৃদ্ধ পাইয়ের পক্ষে অন্য কারো মারফত তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হল না। তখন তিং তাকে টেনে নিয়ে সেখান থেকে চলে এলেন।

“আপনার ছেলের আদালত এখান থেকে বেশী দূরে নয়, তিং বললেন, “আপনি তার সঙ্গে দেখা করতে চান?”

পাই সন্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা আরেকটি অট্টালিকার সামনে এসে উপস্থিত হলেন।

“ভেতরে যান!” তিং তাঁকে বললেন।

বৃদ্ধ পাই এগিয়ে যেতেই দেখলেন যে, একটি বিরাট নেকড়ে প্রবেশ পথ আগলে বসে আছে। তিনি ভয়ে ভেতরে যেতে সাহস পেলেন না।

“এগিয়ে যান।” তিং আবার বললেন।

পাই অন্য একটি দরজা দিয়ে একটি বিরাট হলঘরের ভেতরে এলেন। হলঘরের ভেতরে ও বাইরে সর্বত্রই নেকড়ে আর নেকড়ে, তাদের কেউ বসে, কেউ বা শুয়ে, আর অঙ্গনের মাঝখানে দেখলেন সাদা হাড়ের পাহাড়। পাই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। তখন তিং তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়ে তার পিছনে পিছনে এগিয়ে চললেন। ঠিক ঐ সময়েই পাই-এর ছেলে চিয়া বেরিয়ে এল এবং তিং ও তার বাবাকে দেখে খুবই খুশি হল। সে তাঁদেরকে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে তার পরিচারকদের খাবার তৈরী করার আদেশ দিল। তারপরই একটি বিরাট নেকড়ে একজন মরা মানুষকে মুখে ধরে ঘরে ঢুকল।

“এটা কি হচ্ছে?” ভয়মেশানো সুরে বলতে বলতে পাই উঠে দাঁড়ালেন।

“তোমাদের জন্য এটা সামান্য খাবার।”

বৃদ্ধ পাই হাত দিয়ে মৃতদেহটি ঠেলে সরিয়ে দিলেন। তাঁর বুক ধক ধক করতে লাগল, নেকড়েগুলো তার পথরোধ না করে দাঁড়ালে তিনি তখনি ওখান থেকে চলে যেতেন। দিশেহারা হয়ে কি করবেন ভেবে পেলেন না। এমন সময় তিনি লক্ষ্য করলেন যে নেকড়ের দলের কোনটি খাটের নীচে থেকে আর কোনটি বা টেবিলের নীচে হামাগুড়ি দিতে দিতে গর্জন করে চলেছে। অবাক হয়ে তিনি যখন ভাবছেন এসবের অর্থ কি ঠিক সেই মুহূর্তে বর্মে সজ্জিত দু’জন যোদ্ধা দৃঢ়পদে ভেতরে এসে ঢুকল এবং চিয়াকে একটি কালো দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলল। চিয়া সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল এবং তীক্ষ্ণ বিষদাঁতঅলা একটি বাঘে পরিণত হল। তখন এক যোদ্ধা তার তরোয়াল টেনে নিল এবং বাঘটির মাথা কাটতে উদ্যত হলে অপর যোদ্ধা তাকে বাধা দিয়ে বলল :

“একটু অপেক্ষা কর। একে আগামী বছরের চতুর্থ মাসের জন্য রেখে দাও। আমরা বরঞ্চ এখন ওর দাঁতগুলো উপড়ে ফেলি।”

তাই তারা একটি মুগুর নিয়ে এল এবং তা দিয়ে কয়েক ঘা দিতেই বাঘের দাঁতগুলো মাটিতে পড়ে গেল। যন্ত্রণায় বাঘের আর্তনাদের ফলে পাহাড়গুলো কেঁপে উঠল। ভয়ে বৃদ্ধ পাই যেন কাঠ হয়ে গেলেন। ঠিক এমন সময় তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি বুঝলেন এতক্ষণ যা দেখলেন তা ছিল স্বপ্ন।

ব্যথিত হৃদয়ে বৃদ্ধ পাই তিংকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য লোক পাঠালেন, কিন্তু তিং এই আমন্ত্রণ গ্রহণে নিজের অক্ষমতা জানালেন। তারপর পাই এই স্বপ্নের বিবরণ লিখে তাঁর মেজ ছেলের মারফত চিয়ার কাছে পাঠালেন, এবং সঙ্গে একটি চিঠিতে আন্তরিক সাবধানবাণী ও উত্তম পরামর্শ দিলেন। সেখানে পৌঁছেই মেজভাই যখন দেখতে পেল যে চিয়ার সামনের সারির সবগুলো দাঁতই পড়ে গেছে, তখন সে বিস্মিত হল। জেলাশাসক বলল যে মাতাল অবস্থায় ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে তার দাঁতগুলো খোয়া গেছে, তবে দুর্ঘটনার তারিখ ও তার বাবার স্বপ্ন দেখার দিনটি হুবহু মিলে গেল। তখন সে শঙ্কিত হয়ে চিয়ার হাতে তাদের বাবার লেখা চিঠিটি দিল। চিঠি পড়ে চিয়ার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। তবে সে এমন কিছু হয় নি এমন ভাব দেখিয়ে বলল, “একটি আকস্মিক মিলই বলতে পার, একটা স্বপ্নকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা কেন?”

চিয়া তখন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দিয়ে হাত করার কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকত। উদ্দেশ্য উচ্চপদ প্রাপ্তিতে তাদের সুপারিশ পাওয়া। তাই এই অদ্ভুত স্বপ্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মত ফুরসৎ তার ছিল না। তার মেজভাই কিছুদিন তার দাদার সঙ্গে কাটাল, কিন্তু যখন সে দেখল যে আদালত দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীতে ভর্তি আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুষ প্রদানকারীদের আসার বিরাম নেই তখন সে চোখের জল ফেলতে ফেলতে চিয়াকে এই পথ থেকে সরে আসার জন্য অনুনয় করতে লাগল।

তাতে জেলাশাসক বিদ্রূপ করে বলল, “তুমি গ্রাম থেকে এসেছ। রাজকর্মচারীদের জীবন সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। কারু পদোন্নতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপরই নির্ভর করে জনসাধারণের ওপর নয়। যদি তোমার উপরওয়ালা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তবেই তুমি একজন ভাল কর্মচারী; জনগণকে ভালবাসলে কি আর উপরওয়ালাদের সন্তুষ্ট রাখা যায়?”

চিয়াকে নিবৃত্ত করতে না পেরে মেজভাই বাড়ি ফিরে গিয়ে তার বাবাকে যা যা দেখে এসেছে সবই বলল। তার কথা শুনে বৃদ্ধ পাই খুব কাঁদলেন। আর কোন উপায় না ভেবে পেয়ে তিনি তাঁর ধন-সম্পত্তি গরীবদের মধ্যে বিতরণ করতে লাগলেন, আর প্রতিদিন দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করতেন যাতে এর প্রতিদানে তাঁর পাপিষ্ঠ পুত্র এবং তার নিরপরাধ স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা শাস্তি থেকে রেহাই পায়।

এর পরের বছর, খবর পাওয়া গেল যে চিয়া সুপারিশক্রমে বেসামরিক প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পদলাভ করেছে। অনেকে বৃদ্ধ পাইকে অভিনন্দন জানাতে এলেন, কিন্তু পাই শুধু কাঁদতে লাগলেন এবং বিছানায় শুয়ে অসুখের অজুহাতে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না। কিছুদিনের মধ্যেই খবর এল যে, চিয়া যখন তার পরিচারকদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিল, তখন এক দল ডাকাত এসে তাদের ঘেরাও করে হত্যা করেছে। একথা শোনার পরই বৃদ্ধ শয্যাত্যাগ করলেন এবং অন্যদের বললেন, “ওর পাপের জন্যই ওর মাথাটা গেল। যাই হোক সৃষ্টিকর্তা আমাদের পরিবারের উপর সদয় হয়েছেন।”

তারপর তিনি ধূপের অর্ঘ্য দিয়ে দেবতাদের ধন্যবাদ জানাতে গেলেন। তাঁর বন্ধুবান্ধব যাঁরা শোক করতে এসেছিলেন তাঁরা তাঁকে নিবৃত্ত করতে চাইলেন এই বলে যে, এই দুঃসংবাদ সত্য নাও হতে পারে। কিন্তু বৃদ্ধ তাঁর বিশ্বাসে অটল রইলেন এবং ছেলের কবর তৈরী করাতে মন দিলেন।

যাই হোক, চিয়া কিন্তু বেঁচে ছিল। আগের পদ ছেড়ে চতুর্থ মাসে যখন সে তার জেলা ছেড়ে নতুন পদে যোগদান করতে যাচ্ছিল তখন পথে সে একদল ডাকাতের কবলে পড়ে। চিয়া তার সব টাকাপয়সা তাদের দিতে চাইলে তারা বলল, “আমরা তোমার টাকাপয়সা নিতে আসি নি, সারা জেলার লোকদের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিশোধ নিতে এসেছি।” এই বলে ডাকাতেরা তার মাথা কেটে ফেলল।

তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, চিয়ার অনুচরদের মধ্যে সি তাছেং কে? কারণ, সি তাছেং ছিল চিয়ার ডান হাত এবং সেই তাকে সকল অসৎকাজে মদদ জোগাত। যখন অন্যান্যরা তাকে দেখিয়ে দিল, তখন ডাকাতেরা তাকে এবং সেই সঙ্গে অন্য আরও চারজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী যাদের চিয়া রাজধানীতে নিয়ে যাচ্ছিল তাদেরও মেরে ফেলল, তারা লোকজনের কাছ থেকে শেষ কপর্দকটুকু পর্যন্ত আদায় করতে খুব পারদর্শী ছিল। যখন প্রতিশোধ গ্রহণের পালা শেষ হল, তখন ডাকাতেরা তাদের লুণ্ঠন সামগ্রী ভাগাভাগি করে যার যার থলের মধ্যে পুরে নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

চিয়ার আত্মা তখনো তার রাস্তার পাশেই ঘোরা ফেরা করছিল। ঠিক সেই সময় একজন রাজকর্মচারী ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি জানতে চাইলেন, কাকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর অনুগামী অশ্বারোহীরা তাঁকে বলল যে লোকটি হচ্ছে জেলাশাসক পাই।

তখন রাজকর্মচারী আক্ষেপের সুরে বলে উঠলেন, “কি! শ্রদ্ধেয় পাই-এর ছেলে? এই নিষ্ঠুর দৃশ্য দেখা থেকে বৃদ্ধ মানুষটিকে রেহাই দিতে হবে। মাথাটি এনে আবার যথাস্থানে রেখে দাও।”

যখন একজন লোক চিয়ার মাথা তার ঘাড়ের সঙ্গে জোড়া লাগাচ্ছিল, তখন ওই রাজকর্মচারী আবার বললেন, “জেলাশাসক হিসেবে সে ছিল খুব অসৎ, কাজেই ওর মাথা সোজাসুজি না লাগিয়ে এমনভাবে লাগাও যাতে চিবুক ওর কাঁধের উপর থাকে।” বলেই রাজকর্মচারী ওই স্থান ত্যাগ করলেন।

শিগগিরই চিয়ার জ্ঞান ফিরে এল। তার মৃতদেহ নিতে এসে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা দেখল যে সে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। তারা তাকে তুলে নিয়ে ফিরে চলল এবং তার গলার মধ্যে জল ঢেলে দিলে সে তা ঢোক গিলে খেতে পারল। বাড়ি ফিরে আসার মত পর্যাপ্ত টাকাপয়সা হাতে না থাকায় তারা একটি সরাইখানায় গিয়ে উঠল। প্রায় ছ মাস পর বৃদ্ধ পাই একথা শুনতে পেয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে আসার জন্য মেজছেলেকে পাঠালেন। চিয়া তার জীবন ফিরে পেলেও সে শুধু নিজের পিঠটাই দেখতে পেত। মানুষের পরিবর্তে তাকে দেখতে দানবের মতই লাগত। পাই-এর ভাগ্নে ভালভাবেই শাসনকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল, ওই বছরেই সে একজন রাজকীয় হিসাব-পরীক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হল। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ পাই-এর দেখা স্বপ্ন সত্যি বলে প্রমাণিত হল।

এই অদ্ভুত কাহিনীর নিবেশক পরিশেষে মন্তব্য করেছেন : এজগতের অনেক রাজকর্মচারীই হল বাঘ, আর তাদের অধীনস্থরা হল নেকড়ে। রাজকর্মচারীরা বাঘ না হলেও তার অধীনস্থ কর্মচারীরা নেকড়েতে পরিণত হতে পারে; আর কোন কোন রাজকর্মচারী বাঘের চেয়েও অধম। মুশকিল হল মানুষ তাদের সত্যিকার চেহারা দেখতে পায় না। কিন্তু জীবন ফিরে পাবার পর চিয়া নিজকে তেমনিভাবে দেখতে পেত যেমনভাবে অন্যান্য লোকেরা তাকে দেখত। চমৎকার, দেবতাদের চাল-চলন!
সূচীপত্র


দড়ির ভেলকি

লাওশান পর্বতের তাওধর্মী ঋষি

চিয়াওনা

ডাকিনীবিদ্যা

নিষ্কর্মা ওয়াং

ইংনিং

শেয়ালপরী হুংইয়ু

রাক্ষস রাজ্য ও সাগর মেলা

শিকারী থিয়েন

ঝিঁঝিঁ পোকা

খুদে শিকারী কুকুর

অদ্ভুত পায়রা

স্বপ্ন

ওঝার বিয়ে শেয়ালের সাথে

রুইইয়ুন

চন্দ্রমল্লিকা

স্বর্গের দুর্লভ পাথর

লিয়াওচাই-এর অদ্ভুত কাহিনী

বই সম্পর্কে
লেখক পরিচিতি

মিং রাজাদের শাসনামলের শেষদিকে ফু সুংলিং (১৬৪০-১৭১৫) শানতুং প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং মাঞ্চু শাসকদের নব প্রতিষ্ঠিত ছিং রাজবংশের প্রারম্ভিক যুগেই তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়। “লিয়াওচাই-এর অদ্ভুত কাহিনী”তে সংকলিত গল্পগুলি তিনি বহুদিন ধরে লিখেছেন এবং প্রচলিত লোক কাহিনী ও জনপ্রিয় রূপকথার ভিত্তিতেই এগুলি রচিত। এই পুস্তকের প্রথম সংস্করণে ছিল ৪৩১টি গল্প-কাহিনী, কিন্তু অন্য কয়েকটি পাণ্ডুলিপিতে আরো গুটি কতক গল্পের সন্ধান আমরা পেয়েছি। এর সর্বপ্রথম ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে Strange Stories From A Chinese Studio নামে। অনুবাদ করেন H. Giles।

ফু সুংলিং নিজেই এই গল্পগুলি সংগ্রহ করেছিলেন কিংবা হয়ত তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি এই গল্পগুলিতে প্রতিফলিত করেছেন তৎকালীন পরিস্থিতি এবং নিজের পছন্দ-অপছন্দের কথা ব্যক্ত করে এদের এক নতুন রূপ দিয়েছেন। প্রচারের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির যুগে তিনি নয়া শাসনামল, তার দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী এবং অপরাপর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি নিজের ঘৃণা প্রকাশ করতে পারেন নি। তবু তাঁর গল্পের নীতিকথা বুঝতে বেগ পেতে হয় না। তাঁর গল্পগুলির চরিত্রসমূহের অনেকগুলোই হলো শেয়াল, পরী, ভূত-প্রেত এবং অন্যান্য অশরীরী জীব। এগুলি অতিপ্রাকৃত হওয়া সত্ত্বেও মানবিক গুণে গুণান্বিত। এরকম গল্প-কাহিনী থাং ও সুং শাসনামলেই সর্বপ্রথম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ফু সুংলিং তাঁর রচনায় এক চমৎকার শৈল্পিক রূপ ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর রচনাশৈলী অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ও কল্পনা খুবই সমৃদ্ধিশালী।

“লিয়াওচাই-এর অদ্ভুত কাহিনী” এক অক্ষয় রচনা, এতে বর্ণিত সব অদ্ভুত খেয়াল ও কল্পনা এবং বক্তব্য তিনশ’ বছর আগের মতো আজো সকলের প্রিয় ও উপভোগ্য। বর্তমান সংকলনে আমরা এর সতেরটি গল্প-কাহিনী অন্তর্ভুক্ত করেছি।
Share:

Post a Comment

Copyright © SAAP Publication.