চীনের ইসলাম ধর্মাবলম্বী - দশটি সংখ্যালঘু জাতি
On Google Play
On Google Books
On Amazon
In Kobo
On Apple Available Soon ...
প্রকাশনা তথ্য
প্রথম বৈদ্যুতিন সংস্করণ
মে ২০২৩, বৈশাখ ১৪৩০
প্রচ্ছদ
প্রকাশক
সুনীল আকাশ আত্মপ্রকাশ কেন্দ্র (SAAP) প্রকাশনা,
1215-40, Gordonridge Place,
Scarborough, Ontario : M1K 4H8, Canada.
জাতিসমূহের বর্ণনা
হুই জাতি — চীনের যে জাতির মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
চীনের হুইহুই জাতিকে সংক্ষেপে হুই জাতি বলা হয়। মুসলমান হিসাবে পরিচয় দিতে হুই জাতির কেউ কেউ নিজেকে “মু নাগরিক” বলে উল্লেখ করেন। চীনের ১৯৮২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, হুই জাতির মোট লোকসংখ্যা বাহাত্তর লক্ষ। চীনের দশটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে হুই জাতির লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
হুই জাতির কিছু লোক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাস করে, আবার প্রতিটি প্রদেশে, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এবং ছোট-বড়-মাঝারি শহরে হুই জাতির বসতি আছে। তবে নিংশিয়া-হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে, শিনচিয়াং-উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এবং কানসু প্রদেশে, হোনান প্রদেশে, হোপেই প্রদেশে, শানতুং প্রদেশে এবং ছিংহাই প্রদেশে অপেক্ষাকৃত বেশি সংখ্যায় হুই জাতির লোক বাস করে। হুই জাতির মোট লোকসংখ্যার শতকরা ৬৮ জনের বসতি এই সব অঞ্চলে। পেইচিং, থিয়েনচিন, শাংহাই, শেনইয়াং, নানচিং, লিনশিয়া, উচুং, চিনান, শিনিং, লানচৌ, চেংচৌ, খুনমিং, ছেংতু প্রভৃতি বড় বড় শহরেও হুই জাতির দশ-বিশ-ত্রিশ হাজার থেকে এক লক্ষের বেশি লোক থাকে। সারা চীনের নানা জায়গায়ই হুই জাতির লোকদের বাস, তবে কৃষি-অঞ্চলের গ্রামে কিছুটা ঘনীভূতভাবে এবং শহরাঞ্চলে সড়কের কাছাকাছি হুই জাতির বসতি বেশি।
উইগুর জাতি — যে জাতির মূলে আর নামে “ঐক্য” এবং “সন্মিলন”
প্রাচীনকালে শিনচিয়াংকে পশ্চিম অঞ্চল বলা হোতো। সেই দূর অতীতেও শিনচিয়াং-এ বেশ কয়েকটি জাতি একসঙ্গে বাস করতো। শিনচিয়াং বর্তমানে চীনের তেইশটি প্রদেশ ও পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বৃহত্তম। শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আয়তন ষোলো লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি—গোটা চীনের মোট আয়তনের ছ’ভাগের এক ভাগ। শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এক কোটি তিরিশ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে শতকরা ৪৫.৮ জনই উইগুর জাতির লোক। ১৯৮২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, উইগুর জাতির লোকসংখ্যা সাড়ে উনষাট লক্ষ। উইগুর জাতির লোকসংখ্যার শতকরা আশি ভাগেরও বেশি থিয়েনশান পর্বতের দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ শিনচিয়াং-এ চীনের বৃহত্তম উপত্যকা তারিম উপত্যকার প্রান্তবর্তী কোরলা, আখসু, কাশগর আর হেথিয়েন—এই চারটে এলাকায় থাকে। উইগুর জাতির বাকি অংশ থাকে উত্তর শিনচিয়াং-এ উরুমুচি, ইয়ানিং, হামি, তুরফান, শানশান, থোখস্যুন প্রভৃতি বড় আর মাঝারী শহরে।
চীনের তুর্কিভাষী জাতিগুলোর মধ্যে উইগুর জাতির লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। তুর্কি ভাষায় উইগুর অর্থ “ঐক্য”, “সম্মিলন” বা “বশবর্তিতা”। “উইগুর” নামের তাৎপর্য তুর্কি জাতির একটি প্রাচীন কিংবদন্তীর সংগে জড়িত। সেই কিংবদন্তী অনুযায়ী, পশ্চিমাংশের তুর্কি জাতির আদি পুরুষ ওকাসখান ঈশ্বরের একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের পর বহু লোক তার চারপাশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার বশ্যতা স্বীকার করেছিল। এখনকার উইগুর লিপি ১৯৩৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন ও প্রবর্তন করা হয়েছে।
কাজাখ জাতি
শিনচিয়াং অঞ্চলের উত্তর অংশে ইলি নদী এবং ওরছিস (এতিশ) নদী। এই দুটো নদীর অববাহিকার থিয়েনশান পর্বত ও আলতাই পর্বতের মধ্যে এবং তারবাখাদাই পর্বত ও আলাই পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে কাজাখ জাতির বাস। আবাসভূমির খাড়া খাড়া পর্বত, তরঙ্গচঞ্চল নদী এবং বিশাল তৃণভূমির জন্য কাজাখ জাতির লোকেরা গৌরব বোধ করে। ১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, কাজাখ জাতির লোকসংখ্যা ৯ লক্ষেরও বেশি। তারা প্রধানতঃ ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের ইলি, থাছেং ও আলতাই এলাকার বাস করে। এর মধ্যে ইলি এলাকায় থাকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কাজাখ। বোরোকোনো পর্বতের দক্ষিণ দিকে ও থিয়েনশান পর্বতের পশ্চিম দিকে পার্বত্য বলয়ের মধ্যে কুংনাইস তৃণভূমিতে কাজাখ পশুপালকরা বাস করে।
শিনচিয়াং অঞ্চলের উত্তর অংশে ইলি নদী এবং ওরছিস (এতিশ) নদী। এই দুটো নদীর অববাহিকার থিয়েনশান পর্বত ও আলতাই পর্বতের মধ্যে এবং তারবাখাদাই পর্বত ও আলাই পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে কাজাখ জাতির বাস। আবাসভূমির খাড়া খাড়া পর্বত, তরঙ্গচঞ্চল নদী এবং বিশাল তৃণভূমির জন্য কাজাখ জাতির লোকেরা গৌরব বোধ করে। ১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, কাজাখ জাতির লোকসংখ্যা ৯ লক্ষেরও বেশি। তারা প্রধানতঃ ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের ইলি, থাছেং ও আলতাই এলাকার বাস করে। এর মধ্যে ইলি এলাকায় থাকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কাজাখ। বোরোকোনো পর্বতের দক্ষিণ দিকে ও থিয়েনশান পর্বতের পশ্চিম দিকে পার্বত্য বলয়ের মধ্যে কুংনাইস তৃণভূমিতে কাজাখ পশুপালকরা বাস করে।
কিরগিজ জাতি ও তাজিক জাতি — “পামির মালভূমির ঈগল”
কিরগিজ জাতির ও তাজিক জাতির লোকেরা বহু যুগ ধরে শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পশ্চিম দিকে পৃথিবীর শীর্ষস্থল বলে পরিচিত পামির মালভূমিতে বাস করে আসছে। তারা “পাহাড়ী ঈগল” বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে। ১৯৮২ সালের পরিসংখ্যান অনুযারী, সে-সময়ে কিরগিজ জাতির লোকসংখ্যা ছিলো এক লক্ষ তের হাজার। তাদের মধ্যে শতকরা আশি জনের বাস গিজিলসু-কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে। বাকি শতকরা কুড়িজন ছড়িয়ে রয়েছে আশেপাশের উশি, আখসু, ইন্জিশা, তাশকুরগান এবং উত্তর শিনচিয়াংয়ের পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলোতে। ১৯৮২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে-সময়ে তাজিক জাতির লোকসংখ্যা ছাব্বিশ হাজার। তাদের মধ্যে শতকরা ষাট জন থাকে তাশকুরগান তাজিক জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়। বাদবাকিরা ছড়িয়ে রয়েছে তারিম উপত্যকার পশ্চিম দিকের সাচে, জেপু, ইয়েছেং এবং পিসান জেলায়।
কিরগিজ জাতি ও তাজিক জাতির ইতিহাস সুদীর্ঘ। তাশকুরখান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলার উত্তর দিকে শিয়াংবাও নামে একটি জায়গায় দু-তিন হাজার বছর আগেকার একটি প্রাচীন সমাধি পাওয়া গিয়েছে। খৃষ্টপূর্ব ষাট সালে পশ্চিম হান সম্রাট শিনচিয়াং-এ স্থানীয় শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন এবং পামির মালভূমিতে শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।
উজবেক জাতি ও তাতার জাতি
শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে উজবেক জাতির আর তাতার জাতির লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। চীনের ১৯৮২ সালের জাতীয় আদমশুমারী অনুযায়ী উজবেক জাতির লোকসংখ্যা বারো হাজার চার শো এবং তাতার জাতির লোকসংখ্যা চার হাজার এক শো। উজবেক জাতির লোকেরা শিনচিয়াংয়ের শতকরা ৮৫টি জেলায় এবং শহরে বাস করে। অর্ধেক লোক উরুমুচি, ইনিং, কাশগর, থাছিন, সাচে আর ইয়েছেং এই ছ’টি বড় শহরের অধিবাসী। তাতার জাতির বেশির ভাগ লোক ইনিং, থাছিন আর উরুমুচি শহরে থাকে। অল্প কিছু লোক বুর্চিন, হাপাহে, ছিথাই এবং উরুমুচি জেলার কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলে বাস করে।
শিনচিয়াং-এ উজবেক জাতি আর তাতার জাতি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্তভাবে বাস করে। বেশির ভাগ লোক জেলাশহরে বা অন্যান্য শহরে থাকে। এর কারণ ঐতিহাসিক।
তুংশিয়াং, পাওআন ও সালার জাতি
চীনের কানসু প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ছিংহাই প্রদেশের সংলগ্ন প্রান্তে লিনশিয়া অঞ্চল আলঙ্কারিক অর্থে চীনের মক্কা নামে বিখ্যাত, কারণ লিনশিয়া অঞ্চলে এবং চারপাশের জেলাগুলোতে দুই প্রদেশের হুই জাতির বহু লোক ছাড়াও তুংশিয়াং জাতি, পাওআন জাতি এবং সালার জাতির লোকেরা বাস করে।
১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, তুংশিয়াং জাতির মোট লোকসংখ্যা দু লক্ষ ঊনআশি হাজার। তারা প্রধানতঃ কানসু প্রদেশের লিনশিয়া-হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বাস করে। তাদের অর্ধেকই থাকে হুয়াংহো নদীর পশ্চিমে তুংশিয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়, বাকিরা থাকে হেচেং, নিংদিং, খাংলে, লিনশিয়া প্রভৃতি জেলায়।
১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, পাওআন জাতির লোকসংখ্যা নয় হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনেরও বেশি থাকে চিশিশান স্বায়ত্তশাসিত জেলায় এবং পাওআন জাতি, তুংশিয়াং জাতি আর সালার জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়, বাকিদের মধ্যে কিছু লোক থাকে হেচেং জেলায় আর লানচৌ শহরে।
সালার জাতির লোকসংখ্যা ৬৯ হাজারের কিছু বেশি। তারা ছিংহাই প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে শুনহুয়ায় সালার জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায় বাস করে। অল্প কিছু লোক থাকে হুওয়ালুং আর চিশিশান স্বায়ত্তশাসিত জেলায়।
তুংশিয়াং জাতির ভাষা এবং পাওআন জাতির ভাষা বেশ কাছাকাছি, মঙ্গোল ভাষার অনুরূপ এবং আলতাই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। সালার জাতির ভাষা আলতাই ভাষাগোষ্ঠীর তুর্কি ভাষা আর উজবেক ভাষার কাছাকাছি। তুংশিয়াং-পাওআন-সালার—তিন ভাষায়ই হান ভাষার অনেক শব্দ আছে এবং তিন জাতিই হান ভাষা ব্যবহার করতে পারে।
চীনের হুইহুই জাতিকে সংক্ষেপে হুই জাতি বলা হয়। মুসলমান হিসাবে পরিচয় দিতে হুই জাতির কেউ কেউ নিজেকে “মু নাগরিক” বলে উল্লেখ করেন। চীনের ১৯৮২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, হুই জাতির মোট লোকসংখ্যা বাহাত্তর লক্ষ। চীনের দশটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে হুই জাতির লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
হুই জাতির কিছু লোক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাস করে, আবার প্রতিটি প্রদেশে, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এবং ছোট-বড়-মাঝারি শহরে হুই জাতির বসতি আছে। তবে নিংশিয়া-হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে, শিনচিয়াং-উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এবং কানসু প্রদেশে, হোনান প্রদেশে, হোপেই প্রদেশে, শানতুং প্রদেশে এবং ছিংহাই প্রদেশে অপেক্ষাকৃত বেশি সংখ্যায় হুই জাতির লোক বাস করে। হুই জাতির মোট লোকসংখ্যার শতকরা ৬৮ জনের বসতি এই সব অঞ্চলে। পেইচিং, থিয়েনচিন, শাংহাই, শেনইয়াং, নানচিং, লিনশিয়া, উচুং, চিনান, শিনিং, লানচৌ, চেংচৌ, খুনমিং, ছেংতু প্রভৃতি বড় বড় শহরেও হুই জাতির দশ-বিশ-ত্রিশ হাজার থেকে এক লক্ষের বেশি লোক থাকে। সারা চীনের নানা জায়গায়ই হুই জাতির লোকদের বাস, তবে কৃষি-অঞ্চলের গ্রামে কিছুটা ঘনীভূতভাবে এবং শহরাঞ্চলে সড়কের কাছাকাছি হুই জাতির বসতি বেশি।
উইগুর জাতি — যে জাতির মূলে আর নামে “ঐক্য” এবং “সন্মিলন”
প্রাচীনকালে শিনচিয়াংকে পশ্চিম অঞ্চল বলা হোতো। সেই দূর অতীতেও শিনচিয়াং-এ বেশ কয়েকটি জাতি একসঙ্গে বাস করতো। শিনচিয়াং বর্তমানে চীনের তেইশটি প্রদেশ ও পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বৃহত্তম। শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আয়তন ষোলো লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি—গোটা চীনের মোট আয়তনের ছ’ভাগের এক ভাগ। শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এক কোটি তিরিশ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে শতকরা ৪৫.৮ জনই উইগুর জাতির লোক। ১৯৮২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, উইগুর জাতির লোকসংখ্যা সাড়ে উনষাট লক্ষ। উইগুর জাতির লোকসংখ্যার শতকরা আশি ভাগেরও বেশি থিয়েনশান পর্বতের দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ শিনচিয়াং-এ চীনের বৃহত্তম উপত্যকা তারিম উপত্যকার প্রান্তবর্তী কোরলা, আখসু, কাশগর আর হেথিয়েন—এই চারটে এলাকায় থাকে। উইগুর জাতির বাকি অংশ থাকে উত্তর শিনচিয়াং-এ উরুমুচি, ইয়ানিং, হামি, তুরফান, শানশান, থোখস্যুন প্রভৃতি বড় আর মাঝারী শহরে।
চীনের তুর্কিভাষী জাতিগুলোর মধ্যে উইগুর জাতির লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। তুর্কি ভাষায় উইগুর অর্থ “ঐক্য”, “সম্মিলন” বা “বশবর্তিতা”। “উইগুর” নামের তাৎপর্য তুর্কি জাতির একটি প্রাচীন কিংবদন্তীর সংগে জড়িত। সেই কিংবদন্তী অনুযায়ী, পশ্চিমাংশের তুর্কি জাতির আদি পুরুষ ওকাসখান ঈশ্বরের একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের পর বহু লোক তার চারপাশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার বশ্যতা স্বীকার করেছিল। এখনকার উইগুর লিপি ১৯৩৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন ও প্রবর্তন করা হয়েছে।
কাজাখ জাতি
শিনচিয়াং অঞ্চলের উত্তর অংশে ইলি নদী এবং ওরছিস (এতিশ) নদী। এই দুটো নদীর অববাহিকার থিয়েনশান পর্বত ও আলতাই পর্বতের মধ্যে এবং তারবাখাদাই পর্বত ও আলাই পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে কাজাখ জাতির বাস। আবাসভূমির খাড়া খাড়া পর্বত, তরঙ্গচঞ্চল নদী এবং বিশাল তৃণভূমির জন্য কাজাখ জাতির লোকেরা গৌরব বোধ করে। ১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, কাজাখ জাতির লোকসংখ্যা ৯ লক্ষেরও বেশি। তারা প্রধানতঃ ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের ইলি, থাছেং ও আলতাই এলাকার বাস করে। এর মধ্যে ইলি এলাকায় থাকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কাজাখ। বোরোকোনো পর্বতের দক্ষিণ দিকে ও থিয়েনশান পর্বতের পশ্চিম দিকে পার্বত্য বলয়ের মধ্যে কুংনাইস তৃণভূমিতে কাজাখ পশুপালকরা বাস করে।
শিনচিয়াং অঞ্চলের উত্তর অংশে ইলি নদী এবং ওরছিস (এতিশ) নদী। এই দুটো নদীর অববাহিকার থিয়েনশান পর্বত ও আলতাই পর্বতের মধ্যে এবং তারবাখাদাই পর্বত ও আলাই পর্বতের মধ্যে বিস্তীর্ণ ভূভাগ জুড়ে কাজাখ জাতির বাস। আবাসভূমির খাড়া খাড়া পর্বত, তরঙ্গচঞ্চল নদী এবং বিশাল তৃণভূমির জন্য কাজাখ জাতির লোকেরা গৌরব বোধ করে। ১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, কাজাখ জাতির লোকসংখ্যা ৯ লক্ষেরও বেশি। তারা প্রধানতঃ ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের ইলি, থাছেং ও আলতাই এলাকার বাস করে। এর মধ্যে ইলি এলাকায় থাকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কাজাখ। বোরোকোনো পর্বতের দক্ষিণ দিকে ও থিয়েনশান পর্বতের পশ্চিম দিকে পার্বত্য বলয়ের মধ্যে কুংনাইস তৃণভূমিতে কাজাখ পশুপালকরা বাস করে।
কিরগিজ জাতি ও তাজিক জাতি — “পামির মালভূমির ঈগল”
কিরগিজ জাতির ও তাজিক জাতির লোকেরা বহু যুগ ধরে শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পশ্চিম দিকে পৃথিবীর শীর্ষস্থল বলে পরিচিত পামির মালভূমিতে বাস করে আসছে। তারা “পাহাড়ী ঈগল” বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে। ১৯৮২ সালের পরিসংখ্যান অনুযারী, সে-সময়ে কিরগিজ জাতির লোকসংখ্যা ছিলো এক লক্ষ তের হাজার। তাদের মধ্যে শতকরা আশি জনের বাস গিজিলসু-কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে। বাকি শতকরা কুড়িজন ছড়িয়ে রয়েছে আশেপাশের উশি, আখসু, ইন্জিশা, তাশকুরগান এবং উত্তর শিনচিয়াংয়ের পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলোতে। ১৯৮২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে-সময়ে তাজিক জাতির লোকসংখ্যা ছাব্বিশ হাজার। তাদের মধ্যে শতকরা ষাট জন থাকে তাশকুরগান তাজিক জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়। বাদবাকিরা ছড়িয়ে রয়েছে তারিম উপত্যকার পশ্চিম দিকের সাচে, জেপু, ইয়েছেং এবং পিসান জেলায়।
কিরগিজ জাতি ও তাজিক জাতির ইতিহাস সুদীর্ঘ। তাশকুরখান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলার উত্তর দিকে শিয়াংবাও নামে একটি জায়গায় দু-তিন হাজার বছর আগেকার একটি প্রাচীন সমাধি পাওয়া গিয়েছে। খৃষ্টপূর্ব ষাট সালে পশ্চিম হান সম্রাট শিনচিয়াং-এ স্থানীয় শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন এবং পামির মালভূমিতে শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।
উজবেক জাতি ও তাতার জাতি
শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে উজবেক জাতির আর তাতার জাতির লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। চীনের ১৯৮২ সালের জাতীয় আদমশুমারী অনুযায়ী উজবেক জাতির লোকসংখ্যা বারো হাজার চার শো এবং তাতার জাতির লোকসংখ্যা চার হাজার এক শো। উজবেক জাতির লোকেরা শিনচিয়াংয়ের শতকরা ৮৫টি জেলায় এবং শহরে বাস করে। অর্ধেক লোক উরুমুচি, ইনিং, কাশগর, থাছিন, সাচে আর ইয়েছেং এই ছ’টি বড় শহরের অধিবাসী। তাতার জাতির বেশির ভাগ লোক ইনিং, থাছিন আর উরুমুচি শহরে থাকে। অল্প কিছু লোক বুর্চিন, হাপাহে, ছিথাই এবং উরুমুচি জেলার কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলে বাস করে।
শিনচিয়াং-এ উজবেক জাতি আর তাতার জাতি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্তভাবে বাস করে। বেশির ভাগ লোক জেলাশহরে বা অন্যান্য শহরে থাকে। এর কারণ ঐতিহাসিক।
তুংশিয়াং, পাওআন ও সালার জাতি
চীনের কানসু প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ছিংহাই প্রদেশের সংলগ্ন প্রান্তে লিনশিয়া অঞ্চল আলঙ্কারিক অর্থে চীনের মক্কা নামে বিখ্যাত, কারণ লিনশিয়া অঞ্চলে এবং চারপাশের জেলাগুলোতে দুই প্রদেশের হুই জাতির বহু লোক ছাড়াও তুংশিয়াং জাতি, পাওআন জাতি এবং সালার জাতির লোকেরা বাস করে।
১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, তুংশিয়াং জাতির মোট লোকসংখ্যা দু লক্ষ ঊনআশি হাজার। তারা প্রধানতঃ কানসু প্রদেশের লিনশিয়া-হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বাস করে। তাদের অর্ধেকই থাকে হুয়াংহো নদীর পশ্চিমে তুংশিয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়, বাকিরা থাকে হেচেং, নিংদিং, খাংলে, লিনশিয়া প্রভৃতি জেলায়।
১৯৮২ সালের হিসাব অনুযায়ী, পাওআন জাতির লোকসংখ্যা নয় হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনেরও বেশি থাকে চিশিশান স্বায়ত্তশাসিত জেলায় এবং পাওআন জাতি, তুংশিয়াং জাতি আর সালার জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায়, বাকিদের মধ্যে কিছু লোক থাকে হেচেং জেলায় আর লানচৌ শহরে।
সালার জাতির লোকসংখ্যা ৬৯ হাজারের কিছু বেশি। তারা ছিংহাই প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে শুনহুয়ায় সালার জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলায় বাস করে। অল্প কিছু লোক থাকে হুওয়ালুং আর চিশিশান স্বায়ত্তশাসিত জেলায়।
তুংশিয়াং জাতির ভাষা এবং পাওআন জাতির ভাষা বেশ কাছাকাছি, মঙ্গোল ভাষার অনুরূপ এবং আলতাই ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। সালার জাতির ভাষা আলতাই ভাষাগোষ্ঠীর তুর্কি ভাষা আর উজবেক ভাষার কাছাকাছি। তুংশিয়াং-পাওআন-সালার—তিন ভাষায়ই হান ভাষার অনেক শব্দ আছে এবং তিন জাতিই হান ভাষা ব্যবহার করতে পারে।
ভূমিকা
চীন একটি বহুজাতিক দেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতি ছাড়াও চীনে ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতি বাস করে। চীনে ধর্মও প্রচলিত বেশ কয়েকটি। প্রধান প্রধান ধর্মের মধ্যে আছে বৌদ্ধ ধর্ম, তাও ধর্ম, ইসলাম ধর্ম এবং খৃষ্টান ধর্ম। চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে দশটি জাতি ইসলাম-ধর্মাবলম্বী। এই দশটি জাতি হল : হুই, উইগুর, কাজাখ, কিরগিজ, তাজিক, তাতার, উজবেক, তুংশিয়াং, সালার এবং পাওআন। এই দশটি জাতির মোট লোকসংখ্যা এক কোটি পঁয়তাল্লিশ লক্ষ আটানব্বই হাজার (১৯৯০ খ্রীস্টাব্দ পূর্বে জনহিসাব)। চীনের নানা জায়গায়ই মুসলমান থাকলেও এই দশটি সংখ্যালঘু জাতি প্রধানতঃ উত্তর-পশ্চিম চীনের শিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, নিংশিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, ছিংহাই প্রদেশ, কানসু প্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত ঘনীভূতভাবে বাস করে।
চীনে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস এক হাজার তিন শো বছরেরও বেশি পুরনো। থাং রাজবংশের (৬১৮-৯০৭ খৃষ্টাব্দ) এবং সুং রাজবংশের (৯৬০–১২৭৯ খৃষ্টাব্দ) আমলে চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচলন হয়েছিল। আরব সওদাগররা চীনে আসতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই আরো বেশি সংখ্যায় মুসলমানরা চীনে আসতে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চীনেই বিয়ে করে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। ফুচৌ, ছুয়ানচৌ এবং হাংচৌতে এখনও আরবী ভাষা লেখা পাথরের ফলক দেখা যায়। বর্তমানে চীনের মোট এক কোটি ত্রিশ লক্ষেরও বেশি লোক ইসলাম-ধর্মাবলম্বী।
ইসলাম-ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন জাতি অধ্যুষিত প্রতিটি অঞ্চলে মসজিদ আছে। চীনের বড় বড় মসজিদগুলোর মধ্যে কুয়াংচৌ-এর হুয়াইসেং (কুংথা) মসজিদ (মসজিদ আল-জিক্রি আল নাবীয়া), সিআন-এর হুয়ান চ্যুয়ে (ছিংচিয়াও) মসজিদ (মসজিদ আল-তওইয়া), ছুয়ানচৌ-এর ছিংচিং (ছিলিন) মসজিদ (মসজিদ আল তাহের), হাংচৌ-এর চেনচিয়াও (ফুংহুয়াং) মসজিদ (মসজিদ আল আনকা), পেইচিং-এর নিউচিয়ে মসজিদ (মসজিদ শাহ্রায়ে আল বকর) এবং শিনচিয়াং-এর কাশগরের ঈদগাহ মসজিদ বিখ্যাত। ঈদগাহ মসজিদ শিনচিয়াং-এর বৃহত্তম মসজিদ। ১৭৯৮ খৃষ্টাব্দে ২.৪৭ একর জুড়ে ঈদগাহ মসজিদ তৈরি হয়েছিল। মসজিদটির প্রধান ফটকের দুপাশে দুটো দশ মিটারেরও বেশি উঁচু হলুদ রঙের মিনার পবিত্রতা-দ্যোতক এবং মহিমাব্যঞ্জক। নামাজ পড়ার বিরাট ঘরটিতে ছয়-সাত হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। কারুকাজকরা একশো চল্লিশটি কাঠের থামের উপর সাদারঙের বিরাট গম্বুজ। গম্বুজের নিচের অংশে নানা ধরনের ফুল আর লতাপাতার নকশা। অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবল শিনচিয়াং-এ পনেরো হাজার মসজিদ ও ধর্মস্থান আছে, এবং ধর্মাচার-বিষয়ক কর্মীদের সংখ্যাও এখন পনেরো হাজার।
উত্তর-পশ্চিম চীনের ইসলাম-ধর্মাবলম্বী দশটি সংখ্যালঘু জাতির রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রীতিনীতি এবং মানসিকতাকে ইসলাম ধর্ম গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। কিছু কিছু ধর্মীয় বিধান জাতিগত আচার-অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেমন, এই জাতিগুলোর লোকেরা শুয়োরের মাংস খায় না, কোনো হিংস্র পশুর মাংস খায় না, কোনো প্রাণীর রক্ত খায় না, স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া বা রোগে মারা যাওয়া কোনো প্রাণীর মাংস খায় না। বিয়ের জন্য জুম্মার দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। মৃত্যুর পর পরিষ্কার পানিতে মৃতদেহকে গোসল করানোর পর কাফনে জড়ানো হয় এবং ইমাম কোরান তেলাওয়াৎ করার পর অল্পসময়ের মধ্যে মৃতদেহ দাফন করা হয়। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং মিলাদুন্নবী—ইসলাম ধর্মের এই তিনটি পরব এই দশটি জাতির প্রধান পরব।
চীনে ইসলাম ধর্ম প্রচলিত হওয়ার পর ক্রমঃবিস্তৃত হয়েছে। প্রথমে মুখে মুখে কোরানের সুরা শেখানো হোতো। মিং রাজবংশের রাজত্বকালের (১৩৬৮-১৬৪৪ খৃষ্টাব্দ) শেষদিকে এবং ছিং রাজবংশের রাজত্বকালের (১৬৪৪-১৯১১ খৃষ্টাব্দ) প্রথম দিকে হান ভাষায় ইসলাম-সংক্রান্ত বই প্রকাশিত হয়। ধর্মমত, ইতিহাস, দর্শন, আইন ইত্যাদি সংক্রান্ত ওয়াং তাইইয়ু, মা চু, লিউ চি, মা তেসিন প্রমুখ বিশিষ্ট মুসলমান পণ্ডিতের গবেষণা ও ব্যাখ্যা চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচলনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তাঁদের রচনাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা আছে। উদাহরণতঃ লিউ চির লেখা “শরীয়তের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা” নামে একটি বই-এ খাদ্যাখাদ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এক কথায়, ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী “শুদ্ধ খাদ্য খাওয়া যায়, দূষণীয় খাদ্য খাওয়া মানা”—এই নীতি মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাসের নিয়ামক। ইসলাম-ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যে লিউ চির তত্ত্বব্যাখ্যার প্রভাব আছে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী গড়ে- ওঠা খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন জাতির জীবনযাপন রীতির একটি বৈশিষ্ট্য।
ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতার নীতি গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের ধর্মঘটিত ব্যাপারে একটি মূলনীতি ও স্থায়ী কর্মপন্থা। গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে নাগরিকদের ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা সুরক্ষিত। সংবিধানে বলা হয়েছে, “কোনো সরকারী সংস্থা, কোনো সামাজিক গোষ্ঠী অথবা কোনো ব্যক্তি ধর্মবিশ্বাস পোষণ করতে বা না-করতে নাগরিকদের বাধ্য করতে পারবে না কিংবা আস্তিক-নাস্তিক ভেদে কোনো নাগরিকের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না। রাষ্ট্র স্বাভাবিক ধর্মীয় কার্যকলাপের সুরক্ষা করবে।” গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের ফৌজদারী আইনের ১৪৭টি ধারায় ধার্য করে দেওয়া হয়েছে যে, “কোনো সরকারী সংস্থার কর্মী বা কর্মীরা যদি অবৈধভাবে কোনো নাগরিককে বা নাগরিকদেরকে ধর্মবিশ্বাসের বৈধ স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে অথবা সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি লংঘন করে, তাহলে তাকে বা তাদেরকে অনধিক দু বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হবে।” এইভাবে আইন বলবৎ করে সংবিধানের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
চীনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিজের নিজের ধর্মীয় সংস্থা এবং মুখপত্র আছে। ১৯৫২ সালের গোড়ার দিকে বুরহান শহিদী, নুর মোহাম্মদ তা ফুসেং, মোহাম্মদ মাকিন, ফাং সিছিয়েন, চাং চিয়ে প্রমুখ বিশিষ্ট চীনা মুসলমান চীনে ইসলামী সমিতি গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৫৩ সালের মে মাসে পেইচিং-এ অনুষ্ঠিত চীনের মুসলমানদের প্রথম সম্মেলনে চীনের ইসলামী সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকগুলো অঞ্চলেও আঞ্চলিক ইসলামী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মুসলমানদের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইসলামী সমিতির আরও প্রসার হয়েছে। অতীতে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ শুধু আরবী ভাষায়ই প্রকাশিত হোতো, উইগুর ভাষায় সেগুলো অনুবাদ করা নিষিদ্ধ ছিল এবং শুধু ইমাম ও কাজীরা ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে পারতেন। চীনে ব্যাপক মুসলমানরা নিজের নিজের মাতৃভাষায় ধর্মগ্রন্থ পাওয়ার জন্যে প্রবল দাবী জানাচ্ছিলেন। শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইসলামী সমিতি প্রভৃতি সংগঠন মুসলমানদের জন্য এক লক্ষ কপি কোরান শরীফ সরবরাহ করেছে এবং উইগুর ভাষায় আর হান ভাষায় “বোখারী হাদিসের” অনুবাদ এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কপি ছাপিয়েছে। উইগুর ভাষায় কোরান শরীফের অনুবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে পারার মতো যুবকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করার উদ্দেশ্যে পেইচিং-এ চীনের ইসলামী ইনস্টিটিউটের এবং শিনচিয়াং-এ ইসলামী ইনস্টিটিউটের পুননির্মাণ চলছে। শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ধর্মশাস্ত্রসংক্রান্ত শিক্ষাক্রমের অধীনে প্রায় দুশো ব্যক্তি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী সমিতির স্ট্যাণ্ডিং কমিটির ত্রিশজন সদস্যের প্রত্যেকেরই নিজের নিজের ছাত্র আছে।
স্বাধীনতা, পারস্পরিক মর্যাদা, সমতা এবং মৈত্রীর ভিত্তিতে চীনের ইসলামী সমিতি এবং বিশিষ্ট চীনা মুসলমানরা পৃথিবীর নানা দেশের ইসলামী সংস্থা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সফর-বিনিময় করে আসছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে চীনের ইসলামী সমিতি এবং সরকারের আয়োজনে শিনচিয়াং-এর বহু মুসলমান প্রতিবছর মক্কা শরীফে গিয়ে হজ করছেন। দেড় হাজার হজযাত্রী মক্কা শরীফে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করে এসেছেন। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বহু লোক চীনের ইসলামী সংস্থার উদ্যোগে চীনের মুসলিম প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে এবং চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীনস্থ ধর্মবিষয়ক ব্যুরোর উদ্যোগে চীনের ধর্ম-বিষয়ক প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে মুসলিম দেশগুলো এবং জাপান সফর করেছেন। তাদের সফর এই সব দেশের সঙ্গে চীনের মৈত্রীসম্পর্ক আরো জোরদার করেছে। বহু বছরের বিরতির পর মক্কা শরীফে চীনের হজযাত্রীদের উপস্থিতি অন্যান্য দেশের হাজার হাজার হাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নানা দেশের মুসলমানদের সামনে চীনের তুংশিয়াং জাতির একজন ইমাম মা চুনচিয়ে যখন কোরান তেলাওয়াত করছিলেন তখন তাঁর শুদ্ধ আরবী উচ্চারণ এবং সঠিক সুরের ক্কেরাত সবাই মুগ্ধবিস্ময়ে শুনছিলেন, এবং তেলাওয়াৎ শেষ হওয়ামাত্র উল্লাসমুখর হয়ে উঠেছিলেন। গায়ের রঙ, চোখের আর চুলের রঙ, নাকের গড়ন, দৈহিক উচ্চতা ইত্যাদি দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা চেহারার নানা জাতির মুসলমানরা আবেগের সঙ্গে মা চুন চিয়েকে উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন। পারস্পরিক মর্যাদা এবং আস্থা নানা দেশের মুসলমানদের হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ ঘটিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে মৈত্রী জোরদার করেছিল।
চীনের দশটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতি সম্পর্কে এবং চীনের মুসলমানদের সম্পর্কে জানতে বিদেশী বন্ধুদের—বিশেষ করে মুসলিম জাহানের বন্ধুদের—সাহায্য করার উদ্দেশ্যে আমরা এই বইটি প্রকাশ করছি। বইটিতে প্রধানতঃ চীনের দশটি ইসলাম-ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতির উৎস, ইতিহাস, ধর্মজীবন, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক জীবন এবং রীতিনীতি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইটিতে ভুল-ত্রুটি পেলে সুধী পাঠকরা যদি আমাদের সে-সম্বন্ধে জানান তা হলে আমরা বাধিত হব।
চীনে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস এক হাজার তিন শো বছরেরও বেশি পুরনো। থাং রাজবংশের (৬১৮-৯০৭ খৃষ্টাব্দ) এবং সুং রাজবংশের (৯৬০–১২৭৯ খৃষ্টাব্দ) আমলে চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচলন হয়েছিল। আরব সওদাগররা চীনে আসতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই আরো বেশি সংখ্যায় মুসলমানরা চীনে আসতে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চীনেই বিয়ে করে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। ফুচৌ, ছুয়ানচৌ এবং হাংচৌতে এখনও আরবী ভাষা লেখা পাথরের ফলক দেখা যায়। বর্তমানে চীনের মোট এক কোটি ত্রিশ লক্ষেরও বেশি লোক ইসলাম-ধর্মাবলম্বী।
ইসলাম-ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন জাতি অধ্যুষিত প্রতিটি অঞ্চলে মসজিদ আছে। চীনের বড় বড় মসজিদগুলোর মধ্যে কুয়াংচৌ-এর হুয়াইসেং (কুংথা) মসজিদ (মসজিদ আল-জিক্রি আল নাবীয়া), সিআন-এর হুয়ান চ্যুয়ে (ছিংচিয়াও) মসজিদ (মসজিদ আল-তওইয়া), ছুয়ানচৌ-এর ছিংচিং (ছিলিন) মসজিদ (মসজিদ আল তাহের), হাংচৌ-এর চেনচিয়াও (ফুংহুয়াং) মসজিদ (মসজিদ আল আনকা), পেইচিং-এর নিউচিয়ে মসজিদ (মসজিদ শাহ্রায়ে আল বকর) এবং শিনচিয়াং-এর কাশগরের ঈদগাহ মসজিদ বিখ্যাত। ঈদগাহ মসজিদ শিনচিয়াং-এর বৃহত্তম মসজিদ। ১৭৯৮ খৃষ্টাব্দে ২.৪৭ একর জুড়ে ঈদগাহ মসজিদ তৈরি হয়েছিল। মসজিদটির প্রধান ফটকের দুপাশে দুটো দশ মিটারেরও বেশি উঁচু হলুদ রঙের মিনার পবিত্রতা-দ্যোতক এবং মহিমাব্যঞ্জক। নামাজ পড়ার বিরাট ঘরটিতে ছয়-সাত হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। কারুকাজকরা একশো চল্লিশটি কাঠের থামের উপর সাদারঙের বিরাট গম্বুজ। গম্বুজের নিচের অংশে নানা ধরনের ফুল আর লতাপাতার নকশা। অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবল শিনচিয়াং-এ পনেরো হাজার মসজিদ ও ধর্মস্থান আছে, এবং ধর্মাচার-বিষয়ক কর্মীদের সংখ্যাও এখন পনেরো হাজার।
উত্তর-পশ্চিম চীনের ইসলাম-ধর্মাবলম্বী দশটি সংখ্যালঘু জাতির রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রীতিনীতি এবং মানসিকতাকে ইসলাম ধর্ম গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। কিছু কিছু ধর্মীয় বিধান জাতিগত আচার-অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেমন, এই জাতিগুলোর লোকেরা শুয়োরের মাংস খায় না, কোনো হিংস্র পশুর মাংস খায় না, কোনো প্রাণীর রক্ত খায় না, স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া বা রোগে মারা যাওয়া কোনো প্রাণীর মাংস খায় না। বিয়ের জন্য জুম্মার দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। মৃত্যুর পর পরিষ্কার পানিতে মৃতদেহকে গোসল করানোর পর কাফনে জড়ানো হয় এবং ইমাম কোরান তেলাওয়াৎ করার পর অল্পসময়ের মধ্যে মৃতদেহ দাফন করা হয়। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং মিলাদুন্নবী—ইসলাম ধর্মের এই তিনটি পরব এই দশটি জাতির প্রধান পরব।
চীনে ইসলাম ধর্ম প্রচলিত হওয়ার পর ক্রমঃবিস্তৃত হয়েছে। প্রথমে মুখে মুখে কোরানের সুরা শেখানো হোতো। মিং রাজবংশের রাজত্বকালের (১৩৬৮-১৬৪৪ খৃষ্টাব্দ) শেষদিকে এবং ছিং রাজবংশের রাজত্বকালের (১৬৪৪-১৯১১ খৃষ্টাব্দ) প্রথম দিকে হান ভাষায় ইসলাম-সংক্রান্ত বই প্রকাশিত হয়। ধর্মমত, ইতিহাস, দর্শন, আইন ইত্যাদি সংক্রান্ত ওয়াং তাইইয়ু, মা চু, লিউ চি, মা তেসিন প্রমুখ বিশিষ্ট মুসলমান পণ্ডিতের গবেষণা ও ব্যাখ্যা চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচলনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তাঁদের রচনাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা আছে। উদাহরণতঃ লিউ চির লেখা “শরীয়তের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা” নামে একটি বই-এ খাদ্যাখাদ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এক কথায়, ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী “শুদ্ধ খাদ্য খাওয়া যায়, দূষণীয় খাদ্য খাওয়া মানা”—এই নীতি মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাসের নিয়ামক। ইসলাম-ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যে লিউ চির তত্ত্বব্যাখ্যার প্রভাব আছে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী গড়ে- ওঠা খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন জাতির জীবনযাপন রীতির একটি বৈশিষ্ট্য।
ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতার নীতি গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের ধর্মঘটিত ব্যাপারে একটি মূলনীতি ও স্থায়ী কর্মপন্থা। গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে নাগরিকদের ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা সুরক্ষিত। সংবিধানে বলা হয়েছে, “কোনো সরকারী সংস্থা, কোনো সামাজিক গোষ্ঠী অথবা কোনো ব্যক্তি ধর্মবিশ্বাস পোষণ করতে বা না-করতে নাগরিকদের বাধ্য করতে পারবে না কিংবা আস্তিক-নাস্তিক ভেদে কোনো নাগরিকের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না। রাষ্ট্র স্বাভাবিক ধর্মীয় কার্যকলাপের সুরক্ষা করবে।” গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের ফৌজদারী আইনের ১৪৭টি ধারায় ধার্য করে দেওয়া হয়েছে যে, “কোনো সরকারী সংস্থার কর্মী বা কর্মীরা যদি অবৈধভাবে কোনো নাগরিককে বা নাগরিকদেরকে ধর্মবিশ্বাসের বৈধ স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে অথবা সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি লংঘন করে, তাহলে তাকে বা তাদেরকে অনধিক দু বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হবে।” এইভাবে আইন বলবৎ করে সংবিধানের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
চীনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিজের নিজের ধর্মীয় সংস্থা এবং মুখপত্র আছে। ১৯৫২ সালের গোড়ার দিকে বুরহান শহিদী, নুর মোহাম্মদ তা ফুসেং, মোহাম্মদ মাকিন, ফাং সিছিয়েন, চাং চিয়ে প্রমুখ বিশিষ্ট চীনা মুসলমান চীনে ইসলামী সমিতি গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৫৩ সালের মে মাসে পেইচিং-এ অনুষ্ঠিত চীনের মুসলমানদের প্রথম সম্মেলনে চীনের ইসলামী সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকগুলো অঞ্চলেও আঞ্চলিক ইসলামী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মুসলমানদের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইসলামী সমিতির আরও প্রসার হয়েছে। অতীতে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ শুধু আরবী ভাষায়ই প্রকাশিত হোতো, উইগুর ভাষায় সেগুলো অনুবাদ করা নিষিদ্ধ ছিল এবং শুধু ইমাম ও কাজীরা ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে পারতেন। চীনে ব্যাপক মুসলমানরা নিজের নিজের মাতৃভাষায় ধর্মগ্রন্থ পাওয়ার জন্যে প্রবল দাবী জানাচ্ছিলেন। শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইসলামী সমিতি প্রভৃতি সংগঠন মুসলমানদের জন্য এক লক্ষ কপি কোরান শরীফ সরবরাহ করেছে এবং উইগুর ভাষায় আর হান ভাষায় “বোখারী হাদিসের” অনুবাদ এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কপি ছাপিয়েছে। উইগুর ভাষায় কোরান শরীফের অনুবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে পারার মতো যুবকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করার উদ্দেশ্যে পেইচিং-এ চীনের ইসলামী ইনস্টিটিউটের এবং শিনচিয়াং-এ ইসলামী ইনস্টিটিউটের পুননির্মাণ চলছে। শিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ধর্মশাস্ত্রসংক্রান্ত শিক্ষাক্রমের অধীনে প্রায় দুশো ব্যক্তি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী সমিতির স্ট্যাণ্ডিং কমিটির ত্রিশজন সদস্যের প্রত্যেকেরই নিজের নিজের ছাত্র আছে।
স্বাধীনতা, পারস্পরিক মর্যাদা, সমতা এবং মৈত্রীর ভিত্তিতে চীনের ইসলামী সমিতি এবং বিশিষ্ট চীনা মুসলমানরা পৃথিবীর নানা দেশের ইসলামী সংস্থা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সফর-বিনিময় করে আসছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে চীনের ইসলামী সমিতি এবং সরকারের আয়োজনে শিনচিয়াং-এর বহু মুসলমান প্রতিবছর মক্কা শরীফে গিয়ে হজ করছেন। দেড় হাজার হজযাত্রী মক্কা শরীফে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করে এসেছেন। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বহু লোক চীনের ইসলামী সংস্থার উদ্যোগে চীনের মুসলিম প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে এবং চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীনস্থ ধর্মবিষয়ক ব্যুরোর উদ্যোগে চীনের ধর্ম-বিষয়ক প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে মুসলিম দেশগুলো এবং জাপান সফর করেছেন। তাদের সফর এই সব দেশের সঙ্গে চীনের মৈত্রীসম্পর্ক আরো জোরদার করেছে। বহু বছরের বিরতির পর মক্কা শরীফে চীনের হজযাত্রীদের উপস্থিতি অন্যান্য দেশের হাজার হাজার হাজীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নানা দেশের মুসলমানদের সামনে চীনের তুংশিয়াং জাতির একজন ইমাম মা চুনচিয়ে যখন কোরান তেলাওয়াত করছিলেন তখন তাঁর শুদ্ধ আরবী উচ্চারণ এবং সঠিক সুরের ক্কেরাত সবাই মুগ্ধবিস্ময়ে শুনছিলেন, এবং তেলাওয়াৎ শেষ হওয়ামাত্র উল্লাসমুখর হয়ে উঠেছিলেন। গায়ের রঙ, চোখের আর চুলের রঙ, নাকের গড়ন, দৈহিক উচ্চতা ইত্যাদি দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা চেহারার নানা জাতির মুসলমানরা আবেগের সঙ্গে মা চুন চিয়েকে উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন। পারস্পরিক মর্যাদা এবং আস্থা নানা দেশের মুসলমানদের হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ ঘটিয়েছিল এবং তাদের মধ্যে মৈত্রী জোরদার করেছিল।
চীনের দশটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতি সম্পর্কে এবং চীনের মুসলমানদের সম্পর্কে জানতে বিদেশী বন্ধুদের—বিশেষ করে মুসলিম জাহানের বন্ধুদের—সাহায্য করার উদ্দেশ্যে আমরা এই বইটি প্রকাশ করছি। বইটিতে প্রধানতঃ চীনের দশটি ইসলাম-ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু জাতির উৎস, ইতিহাস, ধর্মজীবন, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক জীবন এবং রীতিনীতি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইটিতে ভুল-ত্রুটি পেলে সুধী পাঠকরা যদি আমাদের সে-সম্বন্ধে জানান তা হলে আমরা বাধিত হব।
চীনের ইসলাম ধর্মাবলম্বী
: দশটি সংখ্যালঘু জাতি :
হুই
উইগুর
কাজাখ
কিরগিজ
তাজিক
উজবেক
তাতার
তুংশিয়াং
পাওআন
সালার
হুই
উইগুর
কাজাখ
কিরগিজ
তাজিক
উজবেক
তাতার
তুংশিয়াং
পাওআন
সালার
Post a Comment