মোহাম্মদ নজিবর রহমান (১৮৬০ - ১৮ অক্টোবর, ১৯২৩) বাংলা ভাষার একজন ঔপন্যাসিক যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে একজন ঔপন্যাসিক হিসাবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিকাশোন্মুখ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি গণ্য করা হয়। তার আনোয়ারা উপন্যাসটি বিষাদসিন্ধুর পর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জগতে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি উপন্যাস।
নজিবর ১৮৬০ (আনু.) সালে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার চরবেলতৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রতার কারণে তিনি তখনকার নর্মাল (এসএসসি) পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারেন এবং এরপর তিনি আজীবন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেঁছে নেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যচর্চাও করতেন।
তিনি তার জীবনে প্রায় ২০টি উপন্যাস রচনা করেছেন। আনোয়ারা হলো তাঁর রচিত সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস। তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজের সাহিত্যিকদের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা হয়।
সে কালের মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের অহেতুক বৈরী মনোভাব তিনি তীক্ষ্ণভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। অন্য দিকে ১৯০৫ খ্রীস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাও তার দৃষ্টি এড়ায়নি। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ তার মনে আলোড়ন তোলে। এ রকম একটি জাতীয় প্রেক্ষাপটে তিনি বিলাতী বর্জন রহস্য নামক একটি পুস্তিকা রচনা করেন। এটি তৎকালীন বিদ্বান মহলে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল। ১৯০৬ খ্রীস্টাব্দে নওয়াব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম লীগের যে অধিবেশন বসে, তিনি তাতে অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। অপর দিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধেও ছিলেন অকুতোভয়। সলঙ্গায় শিক্ষকতা করা কালে স্খানীয় হিন্দু জমিদার গরু জবাই ও গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে এমত ধর্মীয় অধিকারহরণের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জনাতে থাকেন। তার সংগ্রামের ফলে সলঙ্গায় মুসলমানদের গরু জবাইয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তদুপরি শিক্ষা বিস্তারের মহতী কাজে তিনি আজীবন সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৮৯২ খ্রীস্টাব্দে তিনি চরবেলতৈল গ্রামে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন; যা পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ বালিকা বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। তার রচিত উপন্যাসসমূহ তীক্ষ্ণ সমাজ সচেতনতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করে।
নজিবর রহমান ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
উপন্যাস সম্পর্কে
তাঁর প্রথম রচিত উপন্যাস “আনোয়ারা” উপন্যাসটি একশত বৎসর পরও জনপ্রিয় ও আলোচিত। গ্রামীণ জীবনের পটভূমিকায় রচিত এ উপন্যাসে সমসাময়িক বাঙালি মুসলমান সমাজের পারিবারিক ও সামাজিক চিত্র উজ্জ্বলভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। ধর্ম ও সত্যের জয়, অধর্মের পরাজয় এ উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য। এটি আদর্শভিত্তিক একটি অসাধারণ গ্রন্থ হিসাবে পরিগণিত। “চাঁদতারা বা হাসন-গঙ্গা বাহমণ” ঐতিহাসিক উপন্যাস।
: প্রকাশিত গ্রন্থ :
উপন্যাস
লেখক ২০টির মতো উপন্যাস রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো:
আনোয়ারা;
চাঁদতারা বা হাসান গঙ্গা বাহমনি;
পরিণাম;
গরীবের মেয়ে,
দুনিয়া আর চাই না;
মেহেরউন্নিসা,
প্রেমের সমাধ।
Post a Comment