প্রকাশনা তথ্য
প্রথম সংস্করণ
শ্রাবণ ১৩৬২
প্রথম বৈদ্যুতিন সংস্করণ
পৌষ ১৪২৮, জানুয়ারী ২০২২
প্রচ্ছদ
ইয়াদিরা
প্রকাশক
সুনীল আকাশ আত্মপ্রকাশ কেন্দ্র (SAAP) প্রকাশনা,
1215-40, Gordonridge Place,
Scarborough, Ontario : M1K 4H8, Canada.
লেখক সম্পর্কে
সতু বদ্যি সত্যিই জাত বদ্যি। খুব প্রাচীন কবিরাজ বংশের ছেলে। সে নিজে অবিশ্যি মেডিকাল কলেজ থেকে আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যায় শিক্ষা নিয়েছে। তার বাবা আর ঠাকুর্দাও তাই। তবে তার আগে তাদের বংশটা কবিরাজ বংশই ছিল।
সতু বদ্যি নিজে চিকিৎসা ব্যবসায় করে শহর আর শহরতলী মেশানো এলাকায়। রোগী তার প্রচুর। তার রোগী সেরেছে অনেক, মরেছেও কম নয়। উদয়াস্ত সে রোগী নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
সতু বদ্যিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তা বাপু তুমি ডাক্তারী করে দিব্যি তত রোজগারপাতি করে খাচ্ছ। কিন্তু তাঁতির এঁড়ে গোরু কেনার মত তুমি আবার কাগজ-কলম নিয়ে পড়লে কেন।’
তার উত্তরে সতু বদ্যি যা বলেছিল মোটামুটি তাইই এখানে বলছি।
সতু বদ্যি নাকি যখন মেডিকাল কলেজে ঢুকেছিল তখন তার বাবা তাকে বলেছিলেন— ‘রুগী যদি সতু বদ্যির দোষে সতু বদ্যির দোর থেকে কখনো ফিরে না যায় তাহলে সতু বদ্যির কিংবা তার স্ত্রী-পুত্রের কখনো ভাত কাপড়ের অভাব হবে না।’
সতু বদ্যি তাইতে সব সময়ই চেষ্টা করে রোগী না ফেরাতে, এমন কি মজুরি না পেলেও।
কিন্তু তা সত্ত্বেও সতু বদ্যি মাঝে মাঝে এমন প্যাঁচালো পরিস্থিতিতে পড়ে যে তখন তার কখনো হয়তো ইচ্ছে হয় পাড়া মাতিয়ে কাঁদতে আবার কখনো হয়তো মনে হয় ছেলেবেলার মত মায়ের কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে নালিশ করতে।
কান্না হল সতু বদ্যির ব্যর্থতার কান্না, আর নালিশ? কত ভালো করে গুছিয়ে সতু বদ্যি ও আর সব জাত বদ্যিরা মানুষের স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে পারত অথচ তারা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে—তার জন্যে নালিশ।
কার কাছে এই কান্না আর নালিশ?
কেন? ছেলেবেলার মতই সতু বদ্যি নালিশ করছে তার মায়ের কাছেই, মা অর্থাৎ তার দেশের লোক। তাঁরাই তত সতু বদ্যি আর সব জাত বদ্যিকে জন্ম দিয়েছেন, পালন করেছেন।
আর শুধু কি তাই? ছেলেবেলায় সতু বদ্যি মায়ের সংসারে মা যেমন ছিলেন—সতু বদ্যির দেশের লোকও তো তেমনি। অসীম তাঁদের ক্ষমতা। তাদের সবার ইচ্ছে এক হলে তাঁরা নিশ্চয়ই পারেন সতু বদ্যিদের সবাইকে সুযোগ দিতে সুন্দরতর সুস্থতর জাতি গড়ে তুলতে।
রোজনামচা নাকি সতু বদ্যির ওই কান্না আর নালিশ একসঙ্গে মিশিয়ে হয়েছে।
সতু বদ্যির কোন পুরুষেই কেউ কিন্তু এ রকম নালিশ করতে গিয়েছিল বলে জানা যায় না। তাহলে সতু বদ্যিই বা কেন করতে গেল?
এ প্রশ্নের উত্তরে সতু বদ্যি একেবারে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উৎপত্তি নিয়ে শুরু করে।
দেবাদিদেব মহাদেব নাকি পুরাকালে একবার পৃথিবীতে এসেছিলেন। তখন তিনি মর জগতের আধি ব্যাধি দেখে সহানুভূতিতে একেবারেই ভিজে গেলেন। সেই সময় তিনি সতু বদ্যির এক পূর্বপুরুষকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র দান করে যান।
দান করে মহাদেব খুব খুশি মনে কৈলাসে ফিরে গিয়ে নেশার ঝোঁকে পার্বতীকে খবরটা দিয়ে দিলেন। একটা বিরাট কিছু করে এসেছেন তো যাই হোক।
শুনেই তো পার্বতী একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। আচ্ছা, মানুষ যদি জ্বরা-ব্যাধিতে না মরবে তাহলে তো পৃথিবীর লোকসংখ্যা এত বেড়ে যাবে যে খাদ্যাভাবেই মানুষকে শেষ পর্যন্ত মরতে হবে। (এইখানে সতু বদ্যি আবার মনে করিয়ে দিল যে, সে হিসাবে অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস আসলে পার্বতীর প্রাপ্য গৌরব চুরি করেছেন। বিশ্বাস না হয় ম্যালথাসের জন্ম তারিখ আর পার্বতীর জন্মতারিখ মিলিয়ে দেখুন।)
তখন মহাদেবের চৈতন্য হল। তাই তো নেশার ঘোরে বড্ড কাঁচা কাজ হয়ে গিয়েছে। তখন অনেক ভেবে চিন্তে মহাদেব বললেন— ‘ঠিক হয়েছে, পার্বতী। ব্রহ্মা যখন মৃত্যু লিখে দেবেন তখন সব বৈদ্যেরই ভুল হবে, বুদ্ধি গুলিয়ে যাবে। আর তাতেই মানুষ মরবে।’
তাইতে সতু বদ্যির পূর্বপুরুষরা রুগী মরে গেলে বিধাতা পুরুষ আর হরপার্বতীর উপরে দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত। সুতরাং নালিশ, পুলিস কান্নাকাটির দরকার কি?
কিন্তু এখন এমন সব গোলমেলে কাণ্ড হচ্ছে যে বিধাতা পুরুষ ও হর-পার্বতীর উপর দোষ চাপালে আর ঠিক মিল খাচ্ছে না। মহাদেব এখন আর ধরাধামে আসেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বাড়ছে আর বদলাচ্ছে। আর পার্বতী আর তার মানসপুত্র ম্যালথাসকে কলা দেখিয়ে মানুষের বংশও বেড়ে চলেছে। আর শুধু কি তাই? সংখ্যায় তো বটেই— তাছাড়াও আহারে, বিহারে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, স্বাস্থ্যে, আরোগ্যে সর্ববিষয়েই মানুষ এগিয়ে চলেছে। দুনিয়ার অনেক দেশের লোক— কোটি কোটি মানুষ যোগ দিয়েছে এই চলার মিছিলে। কিন্তু সতু বদ্যির নিজের দেশের লোক খালি ঠোক্কর খাচ্ছে অচলায়তন প্রাচীরে।
অবশ্য পার্বতী যে হেরে গেলেন তার জন্যে তাকে খুব দোষ দেয়া যায় না। কারণ এই আগে চলাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে যে মানুষের নতুন বেদ—বিজ্ঞান, তা তো আর পার্বতী জানতেন না।
তাইতে সতু বদ্যি তার নালিশ, পুলিস আর কান্নাকাটি যা আছে সব তার দেশের লোকের দুয়োরেই হাজির করল।
কারণ আসলে তো তারাই সতু বদ্যির জন্মদাতা বিধাতা।
এই হল সতু বদ্যির রোজনামচার সৃষ্টিতত্ত্ব।
সতু বদ্যি নিজে চিকিৎসা ব্যবসায় করে শহর আর শহরতলী মেশানো এলাকায়। রোগী তার প্রচুর। তার রোগী সেরেছে অনেক, মরেছেও কম নয়। উদয়াস্ত সে রোগী নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
সতু বদ্যিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তা বাপু তুমি ডাক্তারী করে দিব্যি তত রোজগারপাতি করে খাচ্ছ। কিন্তু তাঁতির এঁড়ে গোরু কেনার মত তুমি আবার কাগজ-কলম নিয়ে পড়লে কেন।’
তার উত্তরে সতু বদ্যি যা বলেছিল মোটামুটি তাইই এখানে বলছি।
সতু বদ্যি নাকি যখন মেডিকাল কলেজে ঢুকেছিল তখন তার বাবা তাকে বলেছিলেন— ‘রুগী যদি সতু বদ্যির দোষে সতু বদ্যির দোর থেকে কখনো ফিরে না যায় তাহলে সতু বদ্যির কিংবা তার স্ত্রী-পুত্রের কখনো ভাত কাপড়ের অভাব হবে না।’
সতু বদ্যি তাইতে সব সময়ই চেষ্টা করে রোগী না ফেরাতে, এমন কি মজুরি না পেলেও।
কিন্তু তা সত্ত্বেও সতু বদ্যি মাঝে মাঝে এমন প্যাঁচালো পরিস্থিতিতে পড়ে যে তখন তার কখনো হয়তো ইচ্ছে হয় পাড়া মাতিয়ে কাঁদতে আবার কখনো হয়তো মনে হয় ছেলেবেলার মত মায়ের কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে নালিশ করতে।
কান্না হল সতু বদ্যির ব্যর্থতার কান্না, আর নালিশ? কত ভালো করে গুছিয়ে সতু বদ্যি ও আর সব জাত বদ্যিরা মানুষের স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে পারত অথচ তারা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে—তার জন্যে নালিশ।
কার কাছে এই কান্না আর নালিশ?
কেন? ছেলেবেলার মতই সতু বদ্যি নালিশ করছে তার মায়ের কাছেই, মা অর্থাৎ তার দেশের লোক। তাঁরাই তত সতু বদ্যি আর সব জাত বদ্যিকে জন্ম দিয়েছেন, পালন করেছেন।
আর শুধু কি তাই? ছেলেবেলায় সতু বদ্যি মায়ের সংসারে মা যেমন ছিলেন—সতু বদ্যির দেশের লোকও তো তেমনি। অসীম তাঁদের ক্ষমতা। তাদের সবার ইচ্ছে এক হলে তাঁরা নিশ্চয়ই পারেন সতু বদ্যিদের সবাইকে সুযোগ দিতে সুন্দরতর সুস্থতর জাতি গড়ে তুলতে।
রোজনামচা নাকি সতু বদ্যির ওই কান্না আর নালিশ একসঙ্গে মিশিয়ে হয়েছে।
সতু বদ্যির কোন পুরুষেই কেউ কিন্তু এ রকম নালিশ করতে গিয়েছিল বলে জানা যায় না। তাহলে সতু বদ্যিই বা কেন করতে গেল?
এ প্রশ্নের উত্তরে সতু বদ্যি একেবারে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উৎপত্তি নিয়ে শুরু করে।
দেবাদিদেব মহাদেব নাকি পুরাকালে একবার পৃথিবীতে এসেছিলেন। তখন তিনি মর জগতের আধি ব্যাধি দেখে সহানুভূতিতে একেবারেই ভিজে গেলেন। সেই সময় তিনি সতু বদ্যির এক পূর্বপুরুষকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র দান করে যান।
দান করে মহাদেব খুব খুশি মনে কৈলাসে ফিরে গিয়ে নেশার ঝোঁকে পার্বতীকে খবরটা দিয়ে দিলেন। একটা বিরাট কিছু করে এসেছেন তো যাই হোক।
শুনেই তো পার্বতী একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। আচ্ছা, মানুষ যদি জ্বরা-ব্যাধিতে না মরবে তাহলে তো পৃথিবীর লোকসংখ্যা এত বেড়ে যাবে যে খাদ্যাভাবেই মানুষকে শেষ পর্যন্ত মরতে হবে। (এইখানে সতু বদ্যি আবার মনে করিয়ে দিল যে, সে হিসাবে অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস আসলে পার্বতীর প্রাপ্য গৌরব চুরি করেছেন। বিশ্বাস না হয় ম্যালথাসের জন্ম তারিখ আর পার্বতীর জন্মতারিখ মিলিয়ে দেখুন।)
তখন মহাদেবের চৈতন্য হল। তাই তো নেশার ঘোরে বড্ড কাঁচা কাজ হয়ে গিয়েছে। তখন অনেক ভেবে চিন্তে মহাদেব বললেন— ‘ঠিক হয়েছে, পার্বতী। ব্রহ্মা যখন মৃত্যু লিখে দেবেন তখন সব বৈদ্যেরই ভুল হবে, বুদ্ধি গুলিয়ে যাবে। আর তাতেই মানুষ মরবে।’
তাইতে সতু বদ্যির পূর্বপুরুষরা রুগী মরে গেলে বিধাতা পুরুষ আর হরপার্বতীর উপরে দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত। সুতরাং নালিশ, পুলিস কান্নাকাটির দরকার কি?
কিন্তু এখন এমন সব গোলমেলে কাণ্ড হচ্ছে যে বিধাতা পুরুষ ও হর-পার্বতীর উপর দোষ চাপালে আর ঠিক মিল খাচ্ছে না। মহাদেব এখন আর ধরাধামে আসেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বাড়ছে আর বদলাচ্ছে। আর পার্বতী আর তার মানসপুত্র ম্যালথাসকে কলা দেখিয়ে মানুষের বংশও বেড়ে চলেছে। আর শুধু কি তাই? সংখ্যায় তো বটেই— তাছাড়াও আহারে, বিহারে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, স্বাস্থ্যে, আরোগ্যে সর্ববিষয়েই মানুষ এগিয়ে চলেছে। দুনিয়ার অনেক দেশের লোক— কোটি কোটি মানুষ যোগ দিয়েছে এই চলার মিছিলে। কিন্তু সতু বদ্যির নিজের দেশের লোক খালি ঠোক্কর খাচ্ছে অচলায়তন প্রাচীরে।
অবশ্য পার্বতী যে হেরে গেলেন তার জন্যে তাকে খুব দোষ দেয়া যায় না। কারণ এই আগে চলাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে যে মানুষের নতুন বেদ—বিজ্ঞান, তা তো আর পার্বতী জানতেন না।
তাইতে সতু বদ্যি তার নালিশ, পুলিস আর কান্নাকাটি যা আছে সব তার দেশের লোকের দুয়োরেই হাজির করল।
কারণ আসলে তো তারাই সতু বদ্যির জন্মদাতা বিধাতা।
এই হল সতু বদ্যির রোজনামচার সৃষ্টিতত্ত্ব।
প্রকাশিত গ্রন্থ
সতু বদ্যির রোজনামচা (শ্রাবণ ১৩৬২)
সতু বদ্যির উপাখ্যান (বৈশাখ ১৩৬৩)
সতু বদ্যির উপাখ্যান (বৈশাখ ১৩৬৩)
Post a Comment